বাংলাদেশে দুর্নীতি: প্রতিকার ও বিশ্লেষণ

বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি খাতে দুর্নীতি: বাস্তবসম্মত প্রতিকার এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের রোডম্যাপ

প্রতিবেদক: জে এইচ সুমন, প্রকাশনা: জনতা নিউজ


১. ভূমিকা: ক্লেপ্টোক্র্যাসি থেকে মুক্তি ও দুর্নীতির গভীরতা নির্ণয়

১.১. রিপোর্টের উদ্দেশ্য ও পটভূমি: দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ

বাংলাদেশে দুর্নীতি কেবল বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা ‘পেটি করাপশন’-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন জনগণের মধ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগিয়েছে, তার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ব্যাপক ও সংগঠিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর লড়াই। বিশ্লেষকরা উল্লেখ করছেন, দুর্নীতি এখন ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অবৈধ ব্যবহার দ্বারা সংজ্ঞায়িত হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামোর মূলে ক্ষয় সাধন করেছে।

এই বিশেষ প্রতিবেদনে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের দুর্নীতির আন্তঃসম্পর্ক (Nexus) উন্মোচন করা হয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে কীভাবে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা দুর্নীতির এই চক্রকে শক্তিশালী করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই রিপোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বিচার বিভাগের সংস্কারসহ সম্প্রতি উত্থাপিত নীতিগত প্রস্তাবনাগুলোর আলোকে দীর্ঘমেয়াদী, কার্যকর ও বাস্তবায়নযোগ্য প্রতিকারের একটি সামগ্রিক রোডম্যাপ প্রদান করে।

১.২. দুর্নীতির ধারণা সূচক (CPI 2024): বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান

বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী বৈশ্বিক জোট ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কর্তৃক প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচক (CPI) ২০২৪ অনুযায়ী, বাংলাদেশে দুর্নীতির পরিস্থিতি উদ্বেগজনকভাবে নিম্নগামী হয়েছে। ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫১তম এবং দেশটি স্কোর করেছে ১০০-এর মধ্যে মাত্র ২৩। উল্লেখ্য, সিপিআই মূলত সরকারি খাতের অনুমিত দুর্নীতি পরিমাপ করে।

এই স্কোর গত ১৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর নির্দেশ করে। CPI-এর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের স্কোর ২৫ থেকে ২৮-এর মধ্যে ওঠানামা করলেও, ২০২৪ সালে তা ২৩-এ নেমে এসেছে। এই নিম্নগামী অবস্থান কেবল স্থিতাবস্থাই নয়, বরং এটি ইঙ্গিত দেয় যে, দুর্নীতি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণে গোপনে আরও গভীর ও সংগঠিত হয়েছে, যা সুশাসনের ক্ষেত্রে গুরুতর ঝুঁকি নির্দেশ করে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ শুধুমাত্র যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের (১৭ স্কোর) চেয়ে সামান্য ভালো অবস্থানে রয়েছে। ভুটান (৭২) বা এমনকি ভারত (৩৮) ও শ্রীলঙ্কার (৩২)-এর তুলনায় বাংলাদেশের স্কোর অত্যন্ত কম, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও সুশাসনের ব্যর্থতার এক চরম প্রতিফলন। এই নিম্ন অবস্থান প্রমাণ করে যে, দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ বিশ্বায়নের সুবিধা গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকসই হচ্ছে না।

দেশ স্কোর (১০০-এর মধ্যে) র‍্যাঙ্কিং (১৮০টি দেশের মধ্যে) দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থান উৎস
বাংলাদেশ ২৩ ১৫১ ২য় সর্বনিম্ন 2
আফগানিস্তান ১৭ N/A সর্বনিম্ন 2
ভারত ৩৮ N/A N/A 2
ভুটান ৭২ N/A সর্বোচ্চ 2
ডেনমার্ক (সর্বনিম্ন দুর্নীতি) ৯০ N/A 2

২. বিভাগ ২: রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অভ্যন্তরে দুর্নীতি: সরকারি খাতের ক্ষত

সরকারি খাতে দুর্নীতি এখন সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার মান এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ভূমি প্রশাসন, স্বাস্থ্যসেবা ও সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া—এই তিনটি খাতকে দুর্নীতির প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

২.১. ভূমি খাত: প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির অভয়ারণ্য

ভূমি খাতকে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির অন্যতম শীর্ষ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর ‘জাতীয় খানা জরিপ ২০১২’ অনুযায়ী, ভূমি খাতকে তৃতীয় শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনারও স্বীকার করেছেন যে, ভূমি নিবন্ধন, নামজারি ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ সংক্রান্ত খাতগুলি সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত।

এই খাতে দুর্নীতির ব্যাপকতা বিস্ময়কর: সেবাগ্রহীতা খানার ৫৯ শতাংশই ভূমি সেবা গ্রহণে অনিয়ম-দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার হয়। এই দুর্নীতি চক্রের মাধ্যমে জাতীয়ভাবে মোট প্রাক্কলিত ঘুষের পরিমাণ ছিল ২,২৬১ কোটি টাকা। দুর্নীতির প্রক্রিয়া বহুমুখী। প্রভাবশালী মহল ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং দলিল লেখকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে রাষ্ট্রীয় ও সাধারণ মালিকদের সম্পত্তি আত্মসাৎ করে এবং ভোগদখল করে। তারা জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে মূল্য কম দেখিয়ে থাকে, যার ফলে সরকার প্রকৃত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এমনকি ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত খাস জমি বন্টনেও দুর্নীতি ও বঞ্চনা দেখা যায়। ভূমিসংক্রান্ত দুর্নীতিজনিত সামাজিক নৈরাজ্য এতটাই তীব্র যে, দেশের বিভিন্ন আদালতের বিচারাধীন মামলার প্রায় ৬০ শতাংশের উৎস ভূমি বিরোধ। ভূমির এই জটিলতা নিরসনে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ পাশ হলেও এর বিধিমালা প্রণয়নের কাজ এখনও চলমান থাকায় কার্যকর প্রতিকার শুরু হতে বিলম্ব ঘটছে।

২.২. স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় নৈরাজ্য

স্বাস্থ্যসেবা খাতে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তারের ফলে সেবার মান নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। সরকারি হাসপাতালগুলোর করুণ অবস্থার কারণে রোগীদের প্রায়শই বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য করা হয়, যা স্বাস্থ্যসেবাকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিগত বছরগুলোতে স্বাস্থ্য খাতে একাধিক বহুল আলোচিত কেলেঙ্কারি ঘটেছে, যেমন ফরিদপুর মেডিকেলের পর্দা কেলেঙ্কারি এবং বিভিন্ন মেডিকেল পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস। যদিও রূপপুরের বালিশ কাণ্ডের মতো ঘটনাগুলো গণপূর্তের আওতাধীন, কিন্তু এসব ঘটনা সামগ্রিকভাবে প্রমাণ করে যে, সরকারি কেনাকাটা (Procurement) থেকে শুরু করে পরিষেবা প্রদান পর্যন্ত দুর্নীতির শিকড় গভীরে প্রোথিত।

২.৩. পাবলিক প্রকিউরমেন্ট ও মেগা প্রকল্পের লুণ্ঠন

সরকারি ক্রয় (Procurement) প্রক্রিয়াকে দুর্নীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে দেখা হয়। এখানে ক্রয় বিধিমালার লঙ্ঘন, ক্ষমতার অপব্যবহার, সিন্ডিকেট গঠন এবং দরপত্র প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা সাধারণ ঘটনা। এমনকি সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা আনার জন্য ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) প্রবর্তন হওয়া সত্ত্বেও দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। প্রাক্কলিত মূল্য (Estimated Price) ফাঁসের মাধ্যমে গুটিকয়েক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান একচেটিয়াভাবে কাজ পাচ্ছে, যা ক্রয় আইনে অপরাধ হলেও এর প্রয়োগের অভাবে আইন কার্যকারিতা হারিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাক্কলিত মূল্য ফাঁস হওয়ার কারণে টেন্ডারগুলোতে প্রতিযোগিতা কমে গেছে, গড়ে মাত্র ২ টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি ক্রয় পদ্ধতির এই দুর্বলতার কারণে ৭০ শতাংশ প্রকল্প নির্ধারিত সময় ও খরচে শেষ করা যায় না। এর ফলে জনগণের করের টাকার অপচয় হয় এবং দেশ বেশি দামে জিনিসপত্র কিনতে বাধ্য হয়।

মেগা প্রকল্পগুলোতে এই দুর্নীতি ‘Grand Corruption’ বা বৃহৎ আকারের দুর্নীতিতে রূপ নিয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মেগা প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় অন্যান্য দেশের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বেশি ছিল। এর ফলস্বরূপ, গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের লোকসান ২ লাখ কোটি টাকারও বেশি। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলমের মতে, এসব প্রকল্প জাতীয় চাহিদাকে প্রাধান্য না দিয়ে “অন্যায়-অযৌক্তিক লুণ্ঠনমূলক ব্যয় বাড়ানোর জন্য” নেওয়া হয়েছিল। কর্ণফুলী টানেলের মতো প্রকল্পের অর্থনৈতিক অসামঞ্জস্য এই পদ্ধতিগত লুণ্ঠনের সংস্কৃতিকে স্পষ্ট করে: এক বছরে টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ব্যয় হয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা, অথচ টোল বাবদ আয় হয়েছে মাত্র ৩৭ কোটি টাকা—অর্থাৎ ব্যয় আয়ের সাড়ে তিনগুণ বেশি। দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক মহাপরিচালকের মন্তব্য অনুসারে, “প্রকল্পগুলো নেয়াই হয়েছিল দুর্নীতি করার জন্য এবং টাকা লোপাট করার জন্য”, যা প্রমাণ করে এই লুণ্ঠনটি উপর থেকে শুরু করে এবং সরকারি উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়নে সরাসরি বাধা সৃষ্টি করে।


৩. বিভাগ ৩: আর্থিক খাত, অর্থ পাচার এবং বেসরকারি ব্যবসার দুর্নীতির যোগসূত্র

সরকারি-বেসরকারি খাতের যোগসাজশে আর্থিক খাতে ব্যাপক দুর্নীতি দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে দুর্বল করেছে। এই দুর্নীতি ব্যাংক খাত, বাণিজ্যভিত্তিক অর্থ পাচার এবং আবাসন শিল্পকে প্রভাবিত করেছে।

৩.১. ব্যাংকিং খাতের ভঙ্গুরতা: খেলাপি ঋণ ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা

দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো খেলাপি ঋণ, যা মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত ৪ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, বেনামি ঋণ আমলে নিলে এই অঙ্ক ৪ লাখ কোটি টাকারও বেশি হতে পারে। হলমার্ক, জনতা ব্যাংকের অ্যাননটেক্স এবং বেসিক ব্যাংকের (৪,৫০০ কোটি টাকা লোপাট) মতো বহুল আলোচিত কেলেঙ্কারিগুলো ব্যাংক খাতে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা এবং উচ্চ-পর্যায়ের দায়মুক্তির সংস্কৃতিকে তুলে ধরে।

বেসিক ব্যাংকের মতো উচ্চ-প্রোফাইল মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভূমিকা ছিল বিতর্কিত। দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেও মূল হোতা, বিশেষ করে সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই এবং পরিচালনা পর্ষদকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বোর্ড অফ ডিরেক্টরসের অনুমোদন ছাড়া বড় অঙ্কের ঋণ অনুমোদন অসম্ভব, তাই উচ্চ পদস্থ এবং রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাধর অভিযুক্তদের অব্যাহতি দেওয়ায় এই সন্দেহ তৈরি হয় যে, ক্ষমতাধর রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক গোষ্ঠী আর্থিক দুর্নীতিতে দায়মুক্তি পেয়ে আসছে। এই নির্বাচনী পদক্ষেপ দুর্নীতি দমনের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং ব্যাংকিং খাতে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

৩.২. বাণিজ্যভিত্তিক অর্থ পাচার: পোশাক শিল্পে ওভার/আন্ডার-ইনভয়েসিং

অর্থ পাচার এখন দেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যকে বিপর্যস্ত করার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে যে, সরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা আমদানি-রপ্তানির ইনভয়েস জালিয়াতির মাধ্যমে দেশ থেকে বছরে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে।

এই পাচার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সংগঠিত। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বিল অব এক্সপোর্ট জালিয়াতি করে পণ্য রপ্তানি করে, কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রত্যাবাসিত হয় না। উদাহরণস্বরূপ, ১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অভিনব কায়দায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা (৩ কোটি ৫৩ লাখ মার্কিন ডলার) পাচার করেছে। তারা বিল অব এক্সপোর্টে ‘কোড ২০’ ব্যবহার করে এবং অন্যান্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করে জালিয়াতি করে। সরকারি কর্মকর্তাদের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া এই বিপুল পরিমাণ পাচার অসম্ভব। এই বাণিজ্যভিত্তিক অর্থ পাচার প্রমাণ করে যে, দুর্নীতি এখন ‘Kleptocracy’ বা চৌর্যতান্ত্রিক সরকারের চরিত্র ধারণ করেছে, যেখানে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ও তাদের সুবিধাভোগীরা রাষ্ট্রের সম্পদ লুটপাট করে অর্থনীতিকে দুর্বল করছে।

৩.৩. আবাসন ও রিয়েল এস্টেট খাতে প্রতারণা

আবাসন শিল্পে নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণ, ফ্ল্যাট বিক্রিতে অনিয়ম এবং চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দেওয়ার মতো অভিযোগের কারণে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নকশা অমান্য করে বহুতল ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে দুদক হটলাইন-১০৬ এর মাধ্যমে অভিযোগ পেয়ে একাধিক অভিযান পরিচালনা করেছে। রাজউকের তদারকিতে অনিয়ম থাকায় ডেভেলপাররা বিধি লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণে সাহস পাচ্ছে। এছাড়া, ডোম-ইনোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো আবাসন প্রকল্প থেকে সংগৃহীত অর্থ অবৈধভাবে অন্যান্য খাতে (যেমন কৃষি বা ফার্মাসিউটিক্যালস) স্থানান্তর করেছে, যার ফলে ফ্ল্যাট ক্রেতারা তাদের বৈধ প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

খাত দুর্নীতির ধরণ (উদাহরণসহ) প্রভাব ও আর্থিক ক্ষতি উৎস প্রমাণ
ভূমি প্রশাসন ঘুষের লেনদেন, খাস জমি আত্মসাৎ, জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে রাজস্ব ফাঁকি। ২০১২ সালে প্রাক্কলিত ঘুষ: ২,২৬১ কোটি টাকা। ৬০% মামলার উৎস ভূমি। 8
আর্থিক ও ব্যাংকিং ঋণ কেলেঙ্কারি (Basic Bank), বেনামি ঋণ, উচ্চ পর্যায়ের দায়মুক্তি। খেলাপি ঋণ: ৪.৩৯ লক্ষ কোটি টাকা (মার্চ ২০২৪)। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা। 7
সরকারি ক্রয় ও প্রকল্প প্রাক্কলিত মূল্য ফাঁস, সিন্ডিকেট, কারিগরি বিনির্দেশে পক্ষপাত, অস্বাভাবিক নির্মাণ ব্যয়। বিদ্যুৎ খাতে লোকসান: ২ লক্ষ কোটি টাকা (১৫ বছরে)। ৭০% প্রকল্পের ব্যর্থতা। 12
বাণিজ্য ও রপ্তানি রপ্তানির আড়ালে ওভার/আন্ডার-ইনভয়েসিং, বিল অব এক্সপোর্ট জালিয়াতি। গার্মেন্টস খাত থেকে বছরে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার। 16
আবাসন ও রিয়েল এস্টেট রাজউক নকশা লঙ্ঘন, চুক্তির বরখেলাপ, ক্রেতার অর্থ অন্য খাতে স্থানান্তর। গ্রাহকের আস্থার সংকট, আইনি জটিলতা বৃদ্ধি। 19

৪. বিভাগ ৪: কাঠামোগত দুর্বলতা ও দুর্নীতির মূল কারণ

বাংলাদেশে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তারের মূল কারণ বিচ্ছিন্ন নয়, বরং কাঠামোগত দুর্বলতা, সুশাসনের অভাব এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনৈতিক বন্দিদশা।

৪.১. জবাবদিহি ও সুশাসনের ঘাটতি

দুর্নীতির মূলে রয়েছে প্রশাসনিক ও সরকারি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব। জবাবদিহি না থাকায় দুর্নীতি বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষমতার অপব্যবহার একটি সাধারণ চর্চায় পরিণত হয়। এই পরিস্থিতি রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন ঘটিয়েছে এবং স্থানীয় পর্যায়ে ‘মাস্তানতন্ত্রের’ বিস্তার ঘটিয়েছে, যা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়। মাস্তানতন্ত্র অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, সুশাসনের অভাব এবং দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের ব্যাপকতা থেকে উত্তরণ ব্যতীত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর মতো গুরুত্বপূর্ণ তদারকি সংস্থাগুলো কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে, কারণ তারা রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতা দ্বারা ‘জিম্মি’ ছিল। দুদকের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতা ক্ষুণ্ণ হওয়ায় তারা ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ফলে দুদকের ভেতরেও পেশাগত দেউলিয়াপনা এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই প্রাতিষ্ঠানিক বন্দিদশার কারণেই সংগঠিত দুর্নীতি চক্র, যা বিদ্যুৎ খাত, ব্যাংকিং খাত ও মেগা প্রকল্প থেকে লুণ্ঠন চালিয়েছে, একটি ‘অলিগার্কি’ (Oligarchy) বা সীমিত ক্ষমতাবান গোষ্ঠী সৃষ্টি করেছে। এই চক্রটি অর্থনৈতিক নীতিমালার ওপর প্রভাব বিস্তার করে কালোটাকা সাদা করার প্রস্তাব বা দায়মুক্তি আইনের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ নিশ্চিত করেছে।

দুর্নীতিবাজ কর্মচারীরা চাকরিবিধির প্রতি অবজ্ঞা করে দুর্নীতিতে জড়ালেও আইনের দুর্বলতা এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বিলম্বের কারণে সহজেই পার পেয়ে যায়। তদন্ত শেষে অধিকাংশ দুর্নীতি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়, যা মামলার গুণগত মান এবং দুদকের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। দুর্নীতি দমনে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং বিচারিক প্রক্রিয়াকে সংস্কার করা জরুরি। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতের জন্য পৃথক সুপারিশ করেছে, কিন্তু কার্যকর বিচারিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা না হলে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম ফলপ্রসূ হবে না।


৫. বিভাগ ৫: বাস্তবসম্মত প্রতিকার: একটি সংস্কার রোডম্যাপ

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকরী লড়াই শুধুমাত্র শাস্তি প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না, বরং প্রয়োজন একটি বহু-স্তরীয় এবং কাঠামোগত সংস্কারের। এই সংস্কারের কেন্দ্রে রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় গতি আনা।

৫.১. দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারের প্রস্তাবিত রূপরেখা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৩ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে যে দুদক সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, তাদের প্রস্তাবনাগুলো দুর্নীতি দমনের নতুন যাত্রার জন্য ভিত্তি স্থাপন করেছে। এই সংস্কারগুলোর মূল লক্ষ্য হলো রাষ্ট্রীয় ও সমাজের সকল স্তরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, কারণ কেবল ভালো আইন পাশ করেই সুফল আশা করা যায় না; প্রয়োজন সংগঠিত দুর্নীতি চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান।

৫.১.১. প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি:

কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মহাপরিচালকের সংখ্যা ৮ থেকে ১২-তে উন্নীত করা এবং ১২টি নতুন উইং (অনুবিভাগ) প্রতিষ্ঠা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়াও, কমিশনের মূল কার্যক্রম যেমন—অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, তদন্ত, গোপন অনুসন্ধান এবং প্রসিকিউশনসহ সমস্ত প্রক্রিয়াকে এন্ড-টু-এন্ড অটোমেশনের আওতায় আনা হবে। কার্যক্রমের পরিধি বাড়াতে দেশের প্রতিটি জেলায় পর্যাপ্ত লজিস্টিক সহায়তাসহ দুদক জেলা অফিসগুলো পর্যায়ক্রমে স্থাপন করা উচিত।

৫.১.২. আইনি ও প্রক্রিয়াগত সংস্কার: অর্থ পাচার প্রতিরোধ:

উচ্চ-পর্যায়ের দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের মতো সংগঠিত অপরাধ তদন্তের জন্য দুদকের নেতৃত্বে আন্তঃএজেন্সি সমন্বয়ে একটি হাই-লেভেল টাস্ক ফোর্স গঠন করা অত্যাবশ্যক (সুপারিশ-২৮)। অর্থ পাচার তদন্তে দুদকের তথ্য প্রাপ্তি নিরবচ্ছিন্ন করতে আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৩০৯ সংশোধন করা উচিত (সুপারিশ-২৯)। এই সংশোধন নিশ্চিত করবে যে আর্থিক তথ্য লুকিয়ে রাখতে পারে এমন কোনো বিধি দুদকের তদন্তে বাধা দেবে না। এছাড়া, Comptroller and Auditor General (CAG) এবং Implementation Monitoring and Evaluation Division (IMED)-এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর করা (সুপারিশ-৩০) জরুরি, যাতে তাদের নিরীক্ষায় দুর্নীতি বা অনিয়ম সন্দেহ হলে দ্রুত দুদককে জানানো যায়।

৫.১.৩. প্রসিকিউশন শক্তিশালীকরণ:

মামলার গুণগত মান নিশ্চিত ও তদন্তকে পেশাদার করার জন্য আইনে উল্লিখিত স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিট গঠনের জন্য অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন (সুপারিশ-৩৭)। চুক্তিবদ্ধ আইনজীবীদের পরিবর্তে পর্যায়ক্রমে স্থায়ী প্রসিকিউটর নিয়োগের মাধ্যমে পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করা যেতে পারে।

ক্ষেত্র সুপারিশের প্রকৃতি লক্ষ্য উৎস প্রমাণ
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো মহাপরিচালকের সংখ্যা বৃদ্ধি (৮ থেকে ১২)। জেলা পর্যায়ে অফিস স্থাপন। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো। 18
এনফোর্সমেন্ট উচ্চ-পর্যায়ের দুর্নীতির জন্য হাই-লেভেল টাস্ক ফোর্স গঠন। সংগঠিত দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মূল হোতাদের লক্ষ্যবস্তু করা। 18
আইনি অধিকার আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৩০৯ সংশোধন। CAG ও IMED-এর সঙ্গে MoU স্বাক্ষর। দুদকের জন্য আর্থিক তথ্যে নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। 18
মানব সম্পদ স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিট গঠন এবং কর্মী নিয়োগ। মামলার গুণগত মান নিশ্চিত ও তদন্তকে পেশাদার করা। 18
প্রযুক্তি এন্ড-টু-এন্ড অটোমেশন (অভিযোগ, তদন্ত, প্রসিকিউশন)। দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি। 18

৫.২. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সুশাসন নিশ্চিতকরণ

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দুর্নীতি দমনের একটি অপরিহার্য ভিত্তি। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতে দুর্নীতি প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছে, যা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা উচিত। এছাড়াও, দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার দ্রুত বিচার ও নিষ্পত্তি নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা তৈরি করা দরকার। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে জনগণের কথা বলার সুযোগ এবং বারবার আসা বন্ধ করার জন্য গণশুনানি ও জনগণের ক্ষমতায়নমূলক কার্যক্রমকে দেশব্যাপী জোরদার করা উচিত।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্কৃতি তৈরি করার লক্ষ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধের তথ্যগুলো স্থানীয় জনবহুল এলাকায় বিতরণ করা এবং নৈতিকতা বৃদ্ধির জন্য ‘সততা সংঘ’কে পরামর্শ দেওয়া। দুর্নীতির উৎপত্তিস্থলে গিয়ে সমস্যার সমাধান করার লক্ষ্যে, যে ক্ষেত্রগুলোতে সরকারি কর্মকর্তা ও নাগরিকদের মধ্যকার সামাজিক মিথস্ক্রিয়া ব্যাপক, সেখানে ‘উৎসে যান’ প্রচারণা চালানো। এই প্রচারাভিযান দুর্নীতিবাজদের নেতিবাচক পরিণতি সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেবে এবং দুর্নীতির শিকার ব্যক্তিদের অভিযোগ জানাতে সচেতন ও সাহসী করবে। অভিযোগ প্রক্রিয়া সহজ ও নিরাপদ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে জনগণ নির্ভয়ে দুর্নীতি সম্পর্কে অভিযোগ করতে পারে।


৬. উপসংহার: রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা

বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। বিশ্লেষণে দেখা যায়, যদি পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার সংগঠিত ও যোগসাজশের দুর্নীতি চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান না নেয়, তাহলে কেবল ভালো আইন পাশ বা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। দেশের অর্থনীতিকে সুস্থ করতে হলে সমাজের সর্বস্তরে জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকতে হবে।

দুর্নীতি রোধ করতে হলে প্রশাসনিক অচলাবস্থা দূর করে রাজনীতিতে, আমলাতন্ত্রে এবং ব্যবসায় আমূল ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। দুদক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর দ্রুত ও সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, এবং সরকারি ক্রয় আইনে সংস্কার আনা—এই তিনটি প্রধান স্তম্ভের ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনের সুশাসন। নৈতিক শিক্ষা, প্রযুক্তির ব্যবহার, আইনের কার্যকর প্রয়োগ এবং সর্বোপরি, জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যিক, যা বাংলাদেশকে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে ফিরিয়ে আনবে।


আপনাদের যেকোন সু-চিন্তিত মতামত গ্রহণযোগ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *