বাংলাদেশে ইসকনের ইতিহাস, বিতর্ক ও নিষিদ্ধের দাবি: ধর্ম, ভূমি এবং রাজনৈতিক সংঘাতের এক গভীর বিশ্লেষণ (২০২৪ সংকট সহ)
প্রতিবেদক: জে এইচ সুমন (জনতা নিউজ ম্যাগাজিন)
প্রথম অধ্যায়: ইসকনের বিশ্বজনীন ভিত্তি এবং বাংলাদেশে এর উন্মোচন
১.১. আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ISKCON) দার্শনিক পটভূমি
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (International Society for Krishna Consciousness, সংক্ষেপে ISKCON) হলো একটি গৌড়ীয় বৈষ্ণব হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন, যা ১৯ শতকের বাংলার ভক্তি আন্দোলন, বিশেষত শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রবর্তিত ঐতিহ্যের আধুনিক, আন্তর্জাতিক রূপ। এই আন্দোলনের মূল বিশ্বাস হলো, ভগবান শ্রীকৃষ্ণই হলেন পরমেশ্বর এবং মানব জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত তাঁর প্রতি প্রেম ও ভক্তি (কৃষ্ণ চেতনা)। ইসকনের অনুগামীরা গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের অনুশাসন অনুসরণ করেন এবং বর্তমানে এটি গৌড়ীয় বৈষ্ণব ঐতিহ্যের সবচেয়ে বড় শাখা হিসেবে পরিচিত।
ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ। তিনি ১৯৬৬ সালের জুলাই মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার সময় তিনি ইসকনের সাতটি মূল উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে নথিতে উল্লেখ করেন। এই উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে প্রধান হলো সুসংবদ্ধভাবে মানব-সমাজে ভগবৎ-তত্ত্বজ্ঞান প্রচার করা, সংকীর্তন আন্দোলনকে শিক্ষা দেওয়া ও অনুপ্রাণিত করা, সদস্যদের জন্য একটি পবিত্র স্থান নির্মাণ করা যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিত্যলীলা-বিলাস হবে, এবং পারমার্থিক জীবন যাপনে সমস্ত মানুষকে অনুপ্রাণিত হতে শিক্ষা দেওয়া।
১.২. শ্রীল প্রভুপাদের ঐতিহাসিক বিশ্বযাত্রা ও আমেরিকার মাটিতে বীজ বপন
ইসকনের যাত্রা শুরু হয়েছিল কঠোর সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে। ১৯৬৫ সালে, ৬৯ বছর বয়সে, শ্রীল প্রভুপাদ ভারতের কলকাতা থেকে একটি পণ্যবাহী জাহাজ ‘জলদূত’-এ বিনামূল্যে যাত্রার অনুমতি পান। দীর্ঘ ৩৫ দিনের এই সমুদ্রযাত্রা ছিল অত্যন্ত কঠিন; তিনি দুইবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন। অবশেষে তিনি নিউইয়র্কের একটি নির্জন ব্রুকলিন বন্দরে পৌঁছান। সেই সময় তাঁর সঙ্গে ছিল মাত্র সাত ডলার মূল্যের ভারতীয় রুপি এবং কিছু পবিত্র সংস্কৃত গ্রন্থের অনুবাদিত বই।
ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা যদিও একজন ভারতীয় বাঙালি, তবুও এই সংস্থাটির প্রাতিষ্ঠানিক সূচনা ভারতে নয়, পাশ্চাত্যে হয়েছিল। এই আন্তর্জাতিক ভিত্তিই পরবর্তীতে সংস্থাটির পরিচয় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইসকন শুরু থেকেই একটি বিশ্বজনীন ধর্ম প্রচারের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছে। দক্ষিণ এশীয় ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, ইসকনের এই বৈশ্বিক চরিত্র পরবর্তীকালে বাংলাদেশে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যেখানে উগ্রবাদী পক্ষ ইসকনকে কেবল একটি ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে না দেখে, বরং এটিকে “বিদেশি এজেন্ডা” বা “বিদেশি সংস্থা” হিসেবে চিহ্নিত করার রাজনৈতিক হাতিয়ার তৈরি করেছে।
১.৩. বাংলাদেশে ইসকনের ঐতিহাসিক পদার্পণ (১৯৭০-এর দশক)
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইসকনের ঐতিহাসিক পদার্পণ ঘটে ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে। বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতা লাভ করে এবং ১৯৭২ সালে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংবিধান প্রণয়ন করে, সেই সময়েই ইসকনের প্রাথমিক প্রসার শুরু হয়। এই সময়টিকে স্বাধীন বাংলাদেশে সনাতন ধর্মের প্রতিষ্ঠানিক পুনর্গঠন এবং আন্তর্জাতিকীকরণের প্রথম ধাপ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
বাংলাদেশে প্রথম ইসকন মন্দিরটি ঢাকা শহরে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার প্রেক্ষাপটে হিন্দু ধর্মীয় কার্যক্রমের একটি দৃশ্যমান উন্মোচন ছিল। বর্তমানে ইসকনের সদরদপ্তর বা হেড অফিস ঢাকা শহরের মহাখালী এলাকায় (৮/১ ও ৮/২ স্বপন প্লাজা) অবস্থিত। এছাড়াও, স্বামীবাগ রোড, গেন্ডারিয়ার স্বামীবাগ ইসকন মন্দির (শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির) ঢাকা শহরের একটি প্রধান ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
দ্বিতীয় অধ্যায়: ইসকনের মূল কার্যক্রম ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
২.১. সংকীর্তন আন্দোলন, প্রকাশনা ও ভক্তিমূলক জীবনধারা
ইসকনের কার্যক্রমের কেন্দ্রে রয়েছে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তিত সমবেতভাবে ভগবানের দিব্য নাম কীর্তন করার সংকীর্তন আন্দোলন। এই আন্দোলন বিশ্বব্যাপী কৃষ্ণ চেতনার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রধান মাধ্যম। এছাড়াও, ইসকন তার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নিয়মিতভাবে সাময়িক পত্রিকা, গ্রন্থ এবং অন্যান্য লেখা প্রকাশ ও বিতরণ করে থাকে। বাংলাদেশে ইসকনের সদস্যরা বাংলায় বই লিখে কৃষ্ণচেতনার প্রচার-প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। সংস্থাটি তার সদস্যদের জন্য একটি সরল এবং স্বাভাবিক জীবনধারা সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার ওপর জোর দেয়, যা ভক্তদের পরস্পরের কাছে টেনে আনতে সাহায্য করে।
২.২. সামাজিক দায়বদ্ধতা: ‘ফুড ফর লাইফ’ কার্যক্রমের পরিধি ও বিতর্ক
সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ইসকন বিশ্বব্যাপী ‘ফুড ফর লাইফ’ (Food for Life) কর্মসূচির মাধ্যমে বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করে। এটি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের অন্যতম প্রধান দাতব্য প্রচেষ্টা। তবে, বাংলাদেশে এই কার্যক্রমটি একই সাথে প্রশংসা এবং তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় যে, যদিও ফুড ফর লাইফ কার্যক্রমটি দরিদ্রদের সাহায্য করে, কিছু মহল এই কর্মসূচির মাধ্যমে ধর্মীয় প্রচারের অভিযোগ তুলেছে। বিশেষ করে, মুসলিম কোমলমতি শিশুদেরকে খাবার বিতরণের সময় হিন্দু ধর্মের শ্লোগান দেওয়ানো বা ধর্মীয় প্রচার করার বিতর্ক সমাজে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। সমালোচকরা অভিযোগ করেন যে এটি ‘খাদ্যের বিনিময়ে ধর্ম প্রচার বা রূপান্তর’-এর একটি কৌশল। এই ধরনের বিতর্ক জনমনে ইসকন সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি করে। চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো তখন এই ঘটনাগুলিকে কাজে লাগিয়ে ইসকনকে ‘বিদেশি এজেন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করে, যা সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করে এবং তাদের উগ্রবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নে সুবিধা দেয়।
২.৩. সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ: ঢাকার রথযাত্রা ও উৎসবের বিবর্তন
বাংলাদেশে ইসকন ঐতিহ্যবাহী হিন্দু উৎসব ও রীতিনীতি পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী, রাধা জন্মাষ্টমী, রথযাত্রা, এবং দোলপূর্ণিমা ইসকনের প্রধান পূজা-পার্বণগুলির মধ্যে অন্যতম।
ঢাকার রথযাত্রা একটি শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য, যা ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে। ইসকন এই ঐতিহ্যকে শুধু বাঁচিয়ে রাখেনি, বরং এটিকে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মাত্রায় উন্নীত করেছে। তাঁতীবাজার ও নবাবপুরের রথখোলা থেকে শুরু করে স্বামীবাগ পর্যন্ত বিস্তৃত এই রথযাত্রা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা হিসেবে পরিচিত। এই যাত্রার ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা রথ পোড়ানোর নির্মম ঘটনাও জড়িত রয়েছে। বৃহৎ পরিসরে এই উৎসবগুলির আয়োজন বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মের দৃশ্যমানতা বাড়ায়। এই দৃশ্যমানতা একদলে সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করলেও, অন্য উগ্রপন্থী দলগুলোর কাছে তা আপত্তিকর হতে পারে, যা পরবর্তীতে সংঘাতের কারণ হয়।
সারণী ১: বাংলাদেশে ইসকনের মূল উদ্দেশ্য ও বাস্তবায়ন ক্ষেত্র
| উদ্দেশ্য (শ্রীল প্রভুপাদ প্রবর্তিত) | বাংলাদেশে কার্যক্রমের ক্ষেত্র | সামাজিক প্রভাব | প্রাসঙ্গিক রেফারেন্স |
| ভগবৎ-তত্ত্বজ্ঞান প্রচার | গ্রন্থ প্রকাশনা, ধর্মীয় ক্লাস, সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান | আধ্যাত্মিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও পশ্চিমা ধারণা আমদানি | 2 |
| সংকীর্তন আন্দোলন | নগর কীর্তন, রথযাত্রা, বৃহৎ উৎসব আয়োজন | হিন্দু সংস্কৃতির দৃশ্যমানতা ও সাংস্কৃতিক ঐক্য | 4 |
| ফুড ফর লাইফ (দাতব্য) | বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি | দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়তা, তবে “রূপান্তর” বিতর্ক সৃষ্টি | 2 |
| পবিত্র স্থান নির্মাণ | স্বামীবাগ মন্দির, মহাখালী সদরদপ্তর, চৌমুনি মন্দির | ভক্তদের কেন্দ্রিক মিলনস্থল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা | 8 |
তৃতীয় অধ্যায়: সংখ্যালঘু সুরক্ষা, ভূমি বিরোধ ও উগ্রপন্থীদের আক্রমণ
৩.১. স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে মনোনীত করা হলেও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বজায় রাখা হয়েছে এবং সকল ধর্মকে সমান অধিকার প্রদান করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও, দেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন, হত্যা ও নিপীড়নের ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগের বিষয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা বারবার উল্লেখ করেছেন যে দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার প্রধান কারণ হলো ভূমি কেন্দ্রিক বিরোধ, যা মোট সহিংসতার প্রায় ৭০ শতাংশ। এই সহিংসতাগুলো প্রায়শই সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি ও ধর্মীয় স্থান ধ্বংসের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
৩.২. ইসকন মন্দির ও সম্পত্তি বিরোধ: অর্থনৈতিক দিক ও আইনি জটিলতা
বাংলাদেশে ইসকনের মতো প্রতিষ্ঠান যখন প্রাচীন বা দেবোত্তর সম্পত্তি পরিচালনা করে, তখন তারা ভূমিদস্যুদের (Land grabbers) দ্বারা সৃষ্ট অর্থনৈতিক আক্রমণের সহজ লক্ষ্যে পরিণত হয়। এটি গভীর বিশ্লেষণ থেকে প্রতীয়মান হয় যে ইসকনের বিরুদ্ধে হওয়া অনেক হামলার পেছনে ধর্মীয় বিদ্বেষের পাশাপাশি জমি দখলের অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য নিহিত থাকে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি প্রায়শই দুর্বল আইনি সুরক্ষার কারণে ভূমিদস্যুদের লোভের শিকার হয়। ভূমিদস্যুরা সরাসরি দখলদারিত্বের পরিবর্তে স্থানীয় উগ্রবাদী শক্তিকে ব্যবহার করে ধর্মীয় সংঘাতের পরিবেশ তৈরি করে, যার ফলে অর্থনৈতিক অপরাধের ঘটনাটি “ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত” বা “সাম্প্রদায়িক হামলা” হিসেবে রাজনৈতিক মোড়কে প্রকাশিত হয়।
এর একটি স্পষ্ট উদাহরণ হলো ২০২২ সালের ওয়ারী রাধাকান্ত জিউ মন্দিরের ঘটনা। ২০২২ সালের মার্চ মাসে পুরান ঢাকার ওয়ারীতে রাধাকান্ত জিউ ইসকন মন্দিরের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে হামলা চালানো হয়। পুলিশ এই ঘটনাকে প্রাথমিকভাবে “জমি নিয়ে বিরোধ” হিসেবে উল্লেখ করে। ইসকনের মুখপাত্র অভিযোগ করেছিলেন যে ১৭ ঘণ্টা পর পুলিশ মামলা নিতে রাজি হয়েছিল 17। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিশ্চিত করে যে দেড় কাঠা জমি দখল করার উদ্দেশ্যেই মো. সফিউল্লাহ ও তাঁর লোকজন হামলা চালায় 18। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে ইসকনের ওপর আক্রমণের একটি বড় অংশই সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের বহিঃপ্রকাশ।
৩.৩. ২০২১ সালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও ইসকনের ওপর বর্বর আক্রমণ
ইসকন বাংলাদেশে সবচেয়ে নৃশংস আক্রমণের শিকার হয়েছিল ২০২১ সালের অক্টোবরে। ১৩ অক্টোবর থেকে শুরু করে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত উগ্রপন্থীরা হিন্দুদের ওপর সুপরিকল্পিত হামলা চালায়। চৌমুনির শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ, গৌর নিত্যানন্দ ইসকন মন্দির এই আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল। এই ঘটনায় দুজন ভক্ত, প্রান্ত চন্দ্র দাস ও যতীন চন্দ্র সাহা, নির্মমভাবে খুন হন এবং আরেক ভক্ত গুরুতর আহত হন। হামলাকারীরা মন্দিরের রথ, বিগ্রহ, পবিত্র গ্রন্থ এবং অন্যান্য সম্পত্তি পুড়িয়ে দেয়, ধ্বংস করে এবং লুট করে।
ইসকনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যে, তারা স্থানীয় পুলিশের কাছে সুরক্ষা চেয়েছিল, কিন্তু সেই অনুরোধ উপেক্ষা করা হয়। কর্তৃপক্ষের এই দৃশ্যমান নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে প্রায় ৫০০ উগ্রবাদী পরের দিনও আক্রমণ অব্যাহত রাখে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। ৮২টি দেশের ৭,০০০ এরও বেশি ইসকন ভক্ত বিশ্ব সদরদপ্তর থেকে এই সহিংসতার প্রতিবাদ করেছিলেন।
চতুর্থ অধ্যায়: ২০২৪ সালের রাজনৈতিক সংকট ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবি
৪.১. রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও ইসকনের রাজনৈতিক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া (আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী)
২০২৪ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ইসকন একটি নতুন ধরনের সংকটের মুখে পড়ে। এই সময়ে ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলি দৃশ্যমান সুরক্ষা ও প্রভাব বিস্তার শুরু করে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইসকনকে এই সময়ে টার্গেট করার মূল কারণ হলো, এটি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ভারতের সঙ্গে এর আধ্যাত্মিক সংযোগ রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, ইসকন রাজনৈতিকভাবে ভারতবিরোধী বা হিন্দুত্ববিরোধী (extremist Hindutva organization) Sentiment কাজে লাগানোর জন্য উগ্রপন্থী দলগুলির কাছে একটি আদর্শ লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে। এটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি সরাসরি অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রতিফলন।
৪.২. ইসকন নিষিদ্ধের দাবি: উগ্রপন্থী দলগুলোর অবস্থান
২০২৪ সালের অক্টোবরে জুম্মার নামাজের পর ঢাকা ও চট্টগ্রামে উগ্রবাদী সংগঠনগুলোর বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। হেফাযতে ইসলাম বাংলাদেশ এবং ইনতিফাদা বাংলাদেশের মতো কট্টরপন্থী দলগুলো ইসকনকে “চরমপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠন” হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি জানায়। হেফাযত নেতারা দাবি করেন যে দেশের শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে ইসকনকে নিষিদ্ধ করা জরুরি।
এই পরিস্থিতিতে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (ABT) প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানী ইসকনকে “হিন্দু সংগঠন নয়, ইহুদিদের তৈরি চরমপন্থী সংগঠন” হিসেবে আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধের দাবি জানান। এই ধরনের উসকানি ইসকনের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক চাপ বৃদ্ধি করে।
অন্যদিকে, হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনের জবাবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইসকনকে “ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন” হিসেবে বর্ণনা করে একটি অবস্থানপত্র জমা দিয়েছিল। যদিও এই বিবৃতির পর কূটনৈতিক চাপ তৈরি হলে, সরকার প্রধানের পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরে ব্যাখ্যা দেন যে ইসকন নিষিদ্ধের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি এবং ব্যক্তিগত অপরাধকে সাংগঠনিক অপরাধ থেকে আলাদা করে দেখা উচিত। বাংলাদেশ সরকার ইসকনকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে—এমন খবরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে (যেমন ভারত সরকারের পক্ষ থেকে) তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
৪.৩. চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা
রাজনৈতিক সংকটের এই আবহে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভু, যিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উন্নত চিকিৎসা বা সুরক্ষার পক্ষে ওকালতি করতেন, তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। এই গ্রেপ্তারের ঘটনা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠে।
তবে, ইসকন বাংলাদেশ দ্রুত এই বিতর্কের কেন্দ্র থেকে নিজেদের সাংগঠনিকভাবে দূরে সরিয়ে নেয়। তারা স্পষ্ট জানায় যে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস তাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তাঁর ব্যক্তিগত কাজের জন্য সংস্থা কোনো দায় বহন করে না 24। ইসকনের এই পদক্ষেপটি নির্দেশ করে যে, একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন হিসেবে তারা অভ্যন্তরীণ আইনি ও রাজনৈতিক ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে সাংগঠনিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার কৌশল অবলম্বন করেছে।
পঞ্চম অধ্যায়: সরকার, বিচার বিভাগ ও সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা
৫.১. ইসকন নিষিদ্ধের দাবি প্রসঙ্গে হাইকোর্টের অবস্থান
আইনজীবী মো. মনির উদ্দিন ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হাইকোর্টে মৌখিক আবেদন করেন এবং অভিযোগ করেন যে ইসকন “বাংলাদেশ থেকে ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে”। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট অ্যাটর্নি জেনারেলকে ডেকে পাঠায় এবং সরকারের অবস্থান জানতে চায়।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে জানান যে, ইসকন নিষিদ্ধ হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত সরকার নেবে। আদালত এই বিষয়ে বিচারিক হস্তক্ষেপ করতে রাজি হননি, বরং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। আদালত জানায়, “রাষ্ট্র সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব”। আদালত আরও উল্লেখ করেন যে, “বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও দেশের সব ধর্মের মানুষের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে যা কখনও ভাঙবে না,” এবং রাষ্ট্রের সব নাগরিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের।
৫.২. আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান ও তার সীমাবদ্ধতা
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে নিশ্চিত করেন যে সরকার ইসকন ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে এবং ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার জানায় যে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে এবং তৎপরতা জারি রাখবে।
তবে, সরকারের এই কঠোর অবস্থানের ঘোষণা সত্ত্বেও, দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা থেমে নেই। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৭৪টি সাম্প্রদায়িক হামলায় ২৩ জন নিহত হয়েছেন। এই তথ্য প্রমাণ করে যে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পদক্ষেপ নিলেও, সহিংসতা ও নিপীড়নের মূল কারণগুলো (যেমন ভূমি বিরোধ ও উগ্রপন্থীদের প্রভাব) এখনও সমাজে গভীর মূল ছড়িয়ে আছে। সরকারের নীতি এই পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ উগ্রপন্থীদের চাপ এবং আন্তর্জাতিক উদ্বেগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে পরিলক্ষিত হয়।
৫.৩. প্রতিবেদক জে এইচ সুমন ও ম্যাগাজিন জনতা নিউজ: সংখ্যালঘু সংকট এবং মিডিয়া কভারেজ
বাংলাদেশের সমাজে ইসকনের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলি কভার করতে সংবাদমাধ্যমগুলির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিডিয়া কভারেজ প্রায়শই সংঘাতগুলিকে জনসমক্ষে আনে এবং জনমত গঠনে সহায়তা করে।
জনতা নিউজ একটি ম্যাগাজিন বা সংবাদমাধ্যম যা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও বিশেষ খবর প্রকাশ করে থাকে। ২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ইসকন নিষিদ্ধের দাবির সময় এই ধরনের সংবাদমাধ্যমগুলি জনমত এবং উগ্রপন্থীদের দাবিগুলি তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
প্রতিবেদক জে এইচ সুমন-এর উল্লেখ এই প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও তাঁর সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদন এখানে দেওয়া নেই, তাঁর মতো প্রতিবেদকগণ সম্ভবত ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বা জুলাই অভ্যুত্থান-এর মতো সংকটকালীন ঘটনাগুলি কভার করেছেন। এই ধরনের স্থানীয় প্রতিবেদকগণ দেশের অভ্যন্তরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন এবং সংঘাতের পরিস্থিতিগুলি নথিভুক্ত করেন, যা শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং সংকটকালীন সময়ে মিডিয়া ডিসকোর্স এবং স্থানীয় সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে ইসকন সংকটের গভীরতা বুঝতে সাহায্য করে। স্থানীয় মিডিয়া কভারেজ প্রায়শই আন্তর্জাতিক মহলে যায়।
সারণী ২: বাংলাদেশে ইসকন-কেন্দ্রিক সাম্প্রতিক বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া (২০২১-২০২৪)
| সময়কাল | ঘটনার প্রকৃতি | স্থান | গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়া | সূত্র |
| অক্টোবর ২০২১ | সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভক্ত হত্যা | চৌমুনি মন্দির, নোয়াখালী | আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ, ২ ভক্তের মৃত্যু | 20 |
| মার্চ ২০২২ | জমি দখল ও মন্দির প্রাচীরে হামলা | ওয়ারী, ঢাকা | ভূমি বিরোধ নিয়ে পুলিশের বক্তব্য, হিন্দু ঐক্য পরিষদের নিন্দা | 17 |
| অক্টোবর ২০২৪ | ইসকন নিষিদ্ধের দাবি, সমাবেশ | ঢাকা, চট্টগ্রাম | উগ্রপন্থী দলগুলোর সমাবেশ, সরকার কর্তৃক প্রাথমিক ‘মৌলবাদী’ তকমা | 6 |
| নভেম্বর ২০২৪ | হাইকোর্টে ইসকন নিষিদ্ধের রিট | ঢাকা | হাইকোর্ট কর্তৃক সরকারের কঠোর অবস্থানে সন্তুষ্টি প্রকাশ, বিচারিক হস্তক্ষেপ অস্বীকার | 25 |
ষষ্ঠ অধ্যায়: উপসংহার, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যতের পথে সুপারিশমালা
৬.১. বাংলাদেশের সমাজে ইসকনের বহুমুখী ভূমিকা ও চ্যালেঞ্জের সারসংক্ষেপ
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বাংলাদেশে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরার পাশাপাশি সমাজের একটি অংশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। তারা সংকীর্তন আন্দোলন, গ্রন্থ প্রকাশনা এবং দাতব্য কার্যক্রমের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। তবে, ইসকনকে প্রধানত দুটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে: প্রথমত, প্রাচীন সম্পত্তির দখল নিয়ে ভূমিদস্যুতা জনিত অর্থনৈতিক আক্রমণ; এবং দ্বিতীয়ত, বিশেষ করে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময়, উগ্রবাদী দলগুলোর দ্বারা প্রচারিত “বিদেশি এজেন্ডা” বা “চরমপন্থী হিন্দুত্ববাদী” সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার কারণে রাজনৈতিকভাবে প্ররোচিত আক্রমণ।
ইসকনের বিরুদ্ধে হওয়া সহিংসতাগুলো মূলত অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষা (ভূমি দখল) থেকে জন্ম নেয়, যা পরবর্তীতে রাজনৈতিকভাবে মদদপুষ্ট সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের আড়ালে চালিত হয়। এর ফলে অর্থনৈতিক অপরাধের ঘটনাটি একটি বৃহত্তর ধর্মীয় সংঘাতের রূপ নেয়, যা দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করে।
৬.২. নিরাপত্তা, সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথে সুপারিশমালা
ইসকন এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশের সরকারকে কাঠামোগত দুর্বলতাগুলি মোকাবিলা করতে হবে।
ভূমি সুরক্ষা ও আইনি সংস্কার: সরকারকে অবশ্যই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি, বিশেষত দেবোত্তর সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কঠোর আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। যেহেতু সহিংসতার ৭০ শতাংশের উৎস ভূমিকেন্দ্রিক, তাই ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে জিরো-টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা এবং আদালতের আদেশ ছাড়া ভূমি দখলের সকল চেষ্টাকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা অত্যাবশ্যক।
উগ্রপন্থীদের চিহ্নিতকরণ ও দমন: ইসকনকে ‘চরমপন্থী’ বা ‘বিদেশি এজেন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করে সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টিকারী উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর (যেমন হেফাযতে ইসলাম, ইনতিফাদা বাংলাদেশ) বিরুদ্ধে অবিলম্বে এবং দৃঢ়তার সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টকারী অপতথ্য ও প্রোপাগান্ডা দমন করা জরুরি।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব: বাংলাদেশ সরকারকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং কূটনৈতিক মহলের উদ্বেগ (যেমন মার্কিন রিপোর্ট) আমলে নিতে হবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা প্রয়োজন, যাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের সুনাম ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
৬.৩. তথ্যসূত্র ও গ্রন্থপঞ্জি
এই প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের দাপ্তরিক নথিপত্র, উইকিপিডিয়ার ঐতিহাসিক তথ্য, চ্যানেল, Quora, India Today, The Economic Times, The Daily Ittefaq, Prothom Alo, BBC Bangla, Janata News (সরাসরি উল্লেখ), Benar News, এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও গবেষণা উপাদানের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
