জনবান্ধব আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা: বাংলাদেশের সুশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের রোডম্যাপ
(জনবান্ধব আমলাতন্ত্র, জনপ্রশাসন সংস্কার, সুশাসন, দুর্নীতি দমন, জুলাই সনদ, মেধাভিত্তিক নিয়োগ)
প্রথম অধ্যায়: ভূমিকা ও প্রেক্ষাপট
১.১. নির্বাহী সারসংক্ষেপ: কেন জনবান্ধব আমলাতন্ত্র অপরিহার্য?
জনবান্ধব আমলাতন্ত্রের ধারণাটি কেবল পরিষেবা বিতরণ বা আইন প্রয়োগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি এমন একটি প্রশাসনিক কাঠামো যা জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান বাধাগুলি হলো ব্যাপক দুর্নীতি, আমলাতন্ত্রের রাজনীতিকীকরণ এবং ক্ষমতার অত্যধিক কেন্দ্রীকরণ 2। এই সমস্যাগুলির কারণে জন-আস্থা তলানিতে পৌঁছেছে, যা রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি। বর্তমান প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জনবান্ধব আমলা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কাঠামোগত, প্রক্রিয়াগত এবং নৈতিক সংস্কারের একটি বিস্তৃত রোডম্যাপ উপস্থাপন করে।
এই কাঠামোগত পরিবর্তনের অপরিহার্যতা এই কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে যে, সাধারণ জনগণ বড় অবকাঠামোগত উন্নয়ন (যেমন পদ্মা সেতু বা মেট্রোরেল) দ্বারা নিজেদের জীবনযাত্রার মান পরিমাপ করে না; বরং তারা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, এবং নাগরিক নিরাপত্তার মতো দৈনন্দিন জীবনের স্থিতিশীলতাকেই সুশাসন মনে করে। ফলস্বরূপ, আমলাতন্ত্রের ফোকাস অবশ্যই ‘আউটপুট’ (যা তৈরি হয়েছে) থেকে সরে এসে ‘কল্যাণমূলক ফলাফল’ (Outcome) এর উপর স্থাপন করতে হবে।
১.২. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা: ঐতিহাসিক ব্যর্থতা ও বর্তমান সুযোগ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, জনপ্রশাসন সংস্কারের জন্য বিগত পঞ্চাশ বছরে ২৬টির বেশি সংস্কার কমিশন বা কমিটি গঠিত হলেও, গতানুগতিক জনপ্রশাসন ব্যবস্থা এখনো বহাল রয়েছে। অতীতের এই ব্যর্থতাগুলোর মূল কারণ ছিল রাজনৈতিক সমর্থনের অভাব এবং আমলাতন্ত্রের অভ্যন্তরীণ তীব্র প্রতিরোধ ও বাধা 5। সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করা সহজ হলেও, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আমলাতান্ত্রিক সহযোগিতা ছাড়া তার বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে ওঠে।
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান এবং এর ফলস্বরূপ সৃষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা ভাঙার এক ঐতিহাসিক সুযোগ এনেছে। রাষ্ট্র-কাঠামো পুনর্গঠনের প্রবল অভিপ্রায় থেকেই ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর জন্ম, যার প্রধান লক্ষ্যই হলো সুশাসিত, জবাবদিহিমূলক এবং দুর্নীতিমুক্ত সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এই সনদ আমলাতান্ত্রিক সংস্কারকে কেবল একটি প্রশাসনিক প্রয়োজন হিসেবে নয়, বরং জনগণের প্রত্যাশা পূরণের নৈতিক বাধ্যবাধকতা হিসেবে তুলে ধরেছে।
১.৩. প্রতিবেদনের লক্ষ্য ও এসইও কৌশল
এই প্রতিবেদনের লক্ষ্য হলো জনবান্ধব আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের জন্য একটি কার্যকর নীতি-কাঠামো তৈরি করা, যা কাঠামোগত দুর্বলতা, নৈতিক পতন, এবং সেবার মানের ঘাটতি দূর করবে। প্রতিবেদনটি বিশেষভাবে “জনবান্ধব আমলাতন্ত্র,” “বাংলাদেশ জনপ্রশাসন সংস্কার,” এবং “দুর্নীতি দমন কৌশল” কি-ওয়ার্ডগুলির ওপর গুরুত্বারোপ করে, যাতে নীতিনির্ধারক, গবেষক এবং সাধারণ জনগণ সহজে প্রাসঙ্গিক তথ্য খুঁজে নিতে পারে।
দ্বিতীয় অধ্যায়: জনবান্ধব আমলাতন্ত্রের ধারণা ও সাংবিধানিক ভিত্তি
২.১. জনবান্ধব প্রশাসনের সংজ্ঞা ও মূল মানদণ্ড
জনবান্ধব প্রশাসনের মূল সংজ্ঞাটি হলো: জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে সরকারের কার্যকর সক্ষমতা 1। এই ধারণার প্রধান মাপকাঠিগুলি হলো অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও সামাজিক ন্যায়বিচার সম্পর্কিত। যখন খেটে খাওয়া মানুষ, কৃষক বা শ্রমিকরা তাদের আয় অনুযায়ী সাধ্যমতো বাজার থেকে জিনিসপত্র কিনতে পারে এবং নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে, তখনই তারা সুশাসন অনুভব করে।
জনবান্ধবতার প্রধান সূচকগুলি হলো:
১. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ 1। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বা অবকাঠামোগত উন্নয়ন যতই হোক না কেন, যদি মানুষ বাজারে গিয়ে তার আয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জিনিস কিনতে না পারে, তবে সরকারের সব কৃতিত্বই ফিকে হয়ে যায়।
২. আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা: শক্তিশালী আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, যেখানে ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
৩. সামাজিক ন্যায়বিচার: দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে নারীর নিরাপত্তা এবং সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা, বিশেষত নারীর জন্য নির্যাতনমুক্ত পরিবেশ তৈরি করা।
এই বিশ্লেষণ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, প্রশাসনিক অগ্রাধিকারকে বড় প্রকল্প (Output) বাস্তবায়নের পরিবর্তে জনকল্যাণমূলক ফলাফল (Outcome) নিশ্চিত করার দিকে নিয়ে যাওয়া অপরিহার্য। যদি অবকাঠামো তৈরি হয় কিন্তু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ণ হয়, যা প্রশাসনিক স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর।
২.২. সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা: আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও জনগণের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা
জনবান্ধব আমলাতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করতে হবে বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতির উপর। সংবিধান শোষণমুক্ত সমাজ, আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতা, এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার সকল নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছে।
সংবিধানে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রশাসন প্রক্রিয়ার সকল স্তরে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এই সাংবিধানিক নির্দেশনার একটি মূল উদ্দেশ্য হলো, প্রশাসনিক ক্ষমতা যাতে কেন্দ্রীভূত না হয় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া যেন গণতান্ত্রিকভাবে সম্পন্ন হয়। তবে বাস্তবে এই সাংবিধানিক নির্দেশনা মানা হয় না; বরং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণেই সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। এই কাঠামোগত বৈপরীত্যই জনবান্ধব প্রশাসন গড়ে তোলার পথে প্রধান বাধা।
২.৩. বৈশ্বিক মডেল: নাগরিক-কেন্দ্রিক সেবা প্রদানে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা
নাগরিক-কেন্দ্রিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে যে মডেল গৃহীত হয়েছে, তার লক্ষ্য হলো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি যেন তাদের পরিষেবা ডিজাইন ও বিতরণে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বাড়াতে পারে এবং রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকদের আস্থা জোরদার করতে পারে।
ম্যাককিনসে এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, নাগরিক-কেন্দ্রিক সরকারগুলো পরিষেবা প্রদানে ‘ব্যাংক এবং হোটেল’-এর মতো গুণগত মান বজায় রাখতে চায়। এর অর্থ হলো:
- সমন্বিত পরিষেবা: নাগরিকদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর (Life Events) ভিত্তিতে সমন্বিত তথ্য ও পরিষেবা সরবরাহ করা, যাতে একটি প্রয়োজনে একাধিক দপ্তরে ছুটতে না হয়।
- প্রয়োজনভিত্তিক ডিজাইন: অনেক সরকার তাদের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং প্রক্রিয়া অনুযায়ী পরিষেবা ডিজাইন করে, যার ফলে নাগরিকরা প্রায়শই বিভ্রান্তিকর ওয়েবসাইট এবং অসংগঠিত প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হন। এর বিপরীতে, সফল মডেলগুলি পরিষেবা বিতরণের আগে নাগরিকদের প্রয়োজন ও অগ্রাধিকার বুঝে প্রক্রিয়াটিকে পুনর্গঠন করে।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি কেবল নাগরিক সন্তুষ্টিই বাড়াতে পারে না, বরং একাধিক জটিল চ্যানেলে পরিষেবা সরবরাহের সাথে সম্পর্কিত খরচও হ্রাস করতে পারে। অর্থাৎ, ই-গভর্ন্যান্স উদ্যোগ সফল করতে হলে প্রক্রিয়া ডিজিটাইজেশনের পূর্বে পরিষেবাগুলির সরলীকরণ (Process Simplification) অপরিহার্য।
তৃতীয় অধ্যায়: আমলাতন্ত্রের কাঠামোগত দুর্বলতা ও সংস্কারের চ্যালেঞ্জ
৩.১. কেন্দ্রীভূত প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারের দুর্বলতা
বাংলাদেশের জনপ্রশাসনিক কাঠামোয় সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে কেন্দ্রীভূত 2। এটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণকে প্রায় অসম্ভব করে তোলে। এই কেন্দ্রীভূত ও অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার কারণে মাঠ পর্যায়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কার্যত কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণেই যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।
একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে যদি রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে আমলাতন্ত্র নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ করে তোলে এবং জনগণের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করে। রাষ্ট্রীয় পরিচালন ব্যবস্থায় আমলাদের এই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা, গণতন্ত্রের নীতির পরিপন্থী এবং জনবান্ধব প্রশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি বড় অন্তরায়।
৩.২. আমলাতন্ত্রের রাজনীতিকীকরণ: মেধার পরিবর্তে দলীয় আনুগত্যের প্রাধান্য
জনপ্রশাসন সংস্কারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আমলাতন্ত্রের গভীর রাজনীতিকীকরণ। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো দলীয় প্রভাব। এই রাজনীতিকীকরণের ফলস্বরূপ, নিয়োগ, পদায়ন এবং পদোন্নতির মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে মেধা ও দক্ষতার গুরুত্ব হ্রাস পায়। অনেক ক্ষেত্রেই দলীয় আনুগত্য ও চাটুকারিতা মেধার স্থান দখল করে নেয়।
অগণতান্ত্রিক বা কর্তৃত্ববাদী সরকার পরিচালনার অধীনে থাকা অনেক কর্মকর্তা অনুচিত পদোন্নতি এবং সুবিধা পেয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকারের ‘দোসরে’ পরিণত হয়েছিলেন। এর ফলে আমলাতন্ত্রের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ (Institutionalization) বাধাগ্রস্ত হয়। এই রাজনীতিকীকরণের চক্রটি কেবলমাত্র অদক্ষতা সৃষ্টি করে না, বরং এটি কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা ও দুর্নীতির চক্রকে আরও শক্তিশালী করে তোলে, যা সংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
৩.৩. আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতির চক্র: অর্থ পাচার ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের মতে, ব্যাপক মাত্রার সংগঠিত দুর্নীতি একটি “চৌর্যতান্ত্রিক” (Kleptocratic) সরকারের পতন ঘটিয়েছে। রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে এই দুর্নীতি প্রোথিত। আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থা, সরকারি ক্রয়খাত, ঠিকাদারী ব্যবসা এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য প্রশাসনিক সেবার মান নষ্ট করছে।
যদি রাষ্ট্র দুর্নীতিগ্রস্ত থাকে, তবে কোনো সরকারই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না। দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের কারণে দেশের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ অর্থ অপচয় হয় এবং জনগণ তাদের প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। জনবান্ধব আমলাতন্ত্র গড়ে তোলার জন্য এই সংগঠিত দুর্নীতি চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া অপরিহার্য, যাতে কোনো খাতে সরকারি অর্থ চুরি ও আত্মসাৎ না হয়।
৩.৪. প্রশাসনিক সংস্কারের দীর্ঘ ইতিহাস ও বাস্তবায়নহীনতা
প্রশাসনিক সংস্কার বাংলাদেশে একটি দীর্ঘ এবং বৈচিত্র্যময় ইতিহাস বহন করে; উদাহরণস্বরূপ, জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ‘পে অ্যান্ড সার্ভিস কমিশন’ গঠিত হয়েছিল 5। কিন্তু এই সংস্কার কার্যক্রমগুলির অধিকাংশই মুখ থুবড়ে পড়েছিল মূলত রাজনৈতিক সমর্থনের অভাব এবং আমলাতন্ত্রের অভ্যন্তরীণ বাধার কারণে।
ড. সৈয়দা লাসনা কবীরের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, একটি অতি উচ্চাভিলাষী সংস্কার প্রস্তাবনা তাৎক্ষণিক আশাবাদ তৈরি করতে পারে, কিন্তু বাস্তবায়নহীন এই প্রস্তাবনা দীর্ঘমেয়াদি হতাশার জন্ম দেয়। সুতরাং, বর্তমান প্রেক্ষাপটে কেবল সংস্কার প্রস্তাবনা প্রণয়নই যথেষ্ট নয়; রাজনৈতিক শক্তির সমর্থন অর্জন করে তার বাস্তবায়নে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি।
চতুর্থ অধ্যায়: প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পথে: জুলাই সনদ ও কমিশনসমূহের সুপারিশ
৪.১. গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সংস্কারের সুযোগ ও ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর গুরুত্ব
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে রাষ্ট্র-কাঠামো পুনর্গঠনের ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং সংবিধান সংস্কারের লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশনগুলির সুপারিশের ভিত্তিতে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে, যা সুশাসিত, জবাবদিহিমূলক এবং দুর্নীতিমুক্ত সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দিকনির্দেশনা দেয়। আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনীতি এই জুলাই সনদকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হবে বলে ধারণা করা যায়, যা যেকোনো ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দলকে সংস্কার বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপ দেবে।
৪.২. জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের মূল কাঠামোগত সুপারিশসমূহ
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন (PARC) প্রশাসনকে জনমুখী করার জন্য বেশ কিছু কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত সংস্কারের সুপারিশ করেছে। অতীতে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও, অন্তর্বর্তী সরকার কিছু সুপারিশ আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করে সেগুলোর বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নাগরিকদের পাসপোর্ট দেওয়ার জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন কার্যক্রম বাতিল করা এবং সরকারি সব দপ্তরে গণশুনানি নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হলো, জনপ্রশাসন সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া হওয়ায়, এই কমিশনসমূহের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের জন্য ছোটো আকারে একটি স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বা সংস্কার বাস্তবায়ন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে 2। এই স্থায়ী কাঠামো প্রশাসনিক প্রতিরোধের মুখেও সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
৪.৩. দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব: কঠোর অবস্থান গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উন্নয়নের সুফল সকল জনগণের জন্য অর্থবহ না হলে, সরকার জনগণের আস্থা ধরে রাখতে পারে না। আমলাতন্ত্রকে জনবান্ধব করার জন্য দুর্নীতির মূলোৎপাটন অপরিহার্য।
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারকে অবশ্যই সংগঠিত ও যোগসাজশের দুর্নীতি চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:
- উচ্চমাত্রার দুর্নীতি তদন্তে বিভিন্ন এজেন্সির সমন্বয়ে আলাদা টাস্কফোর্স গঠন।
- তদন্তপূর্ব আবশ্যিক অনুসন্ধান-ব্যবস্থা বিলোপ এবং দুদক আইনের ধারা ৩২ এর ক বিলোপ।
- বাজার-ব্যবস্থা যেন প্রতিযোগিতামূলক থাকে এবং সরকারি অর্থ চুরি ও আত্মসাৎ না হয়, তা নিশ্চিত করা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানও মন্তব্য করেছেন যে, রাজনীতি এবং আমলাতন্ত্রে মৌলিক সংস্কার ছাড়া দুর্নীতি দমন অসম্ভব।
জনবান্ধব আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা শুধুমাত্র জনপ্রশাসনের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের ওপর নির্ভরশীল নয়; এটি দুদক, বিচার বিভাগ এবং পুলিশ সংস্কারের মতো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের ওপরও আন্তঃনির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ, আমলাদের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে স্বাধীন বিচার বিভাগ শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন।
টেবিল ১: জুলাই সনদ কর্তৃক চিহ্নিত প্রধান সংস্কার ক্ষেত্র ও জনবান্ধব আমলাতন্ত্রে তার প্রভাব
| সংস্কার কমিশন | প্রধান লক্ষ্য ও সুপারিশ | জনবান্ধব আমলাতন্ত্রে সরাসরি প্রভাব |
| জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন | ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ; মেধাভিত্তিক নিয়োগ; স্থায়ী সংস্কার বাস্তবায়ন কমিশন গঠন। | প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ও তৃণমূল পর্যায়ে সেবার মান বৃদ্ধি; কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ হ্রাস। |
| দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন | সংগঠিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ; অর্থ আত্মসাৎ রোধ; তদন্তে টাস্কফোর্স। | জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার; রাষ্ট্রীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহার; সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া। |
| নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন | নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও গণমাধ্যম নীতিমালা জারি। | গণতান্ত্রিক কাঠামোর সুদৃঢ়করণ; রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি। |
| বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন | স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা; দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তি ত্বরান্বিত করা। | আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা; আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতার অপব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা। |
| পুলিশ সংস্কার কমিশন | আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি; নারী ও শিশু সুরক্ষায় আইনি কাঠামো তৈরি। | নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ; নারীর জন্য নির্যাতনমুক্ত পরিবেশ তৈরি। |
পঞ্চম অধ্যায়: মেধাভিত্তিক নিয়োগ ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা
৫.১. বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (BPSC) সংস্কার: স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ
জনবান্ধব আমলাতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো একটি নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক সিভিল সার্ভিস। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (PSC) সাংবিধানিকভাবে মেধাভিত্তিক নিয়োগের অভিভাবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও, বাস্তবে এটি দুর্বল এবং এর সদস্যদের নিয়োগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে। মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য PSC-কে অবশ্যই শক্তিশালী করতে হবে।
World Bank-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, PSC-এর স্বাধীনতা এবং পরীক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এর বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য, PSC-কে প্রশাসনিক ও আর্থিক উভয় ক্ষেত্রেই পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। এটি সরকারের মাইক্রো-ম্যানেজমেন্ট থেকে মুক্ত থাকবে। তবে এই স্বাধীনতার বিপরীতে, PSC-এর কর্মকাণ্ডের বহিরাগত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এটিকে সংসদের স্থায়ী কমিটির কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এই ব্যবস্থা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দলীয় পৃষ্ঠপোষকতা (Patronage) রোধ করবে এবং যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন নিশ্চিত করবে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার দুর্বলতা আমলাতন্ত্রের নৈতিক ভিত্তিকে নষ্ট করে; যদি শুরুতে বিশ্বাসযোগ্যতা না থাকে, তবে পরবর্তী প্রশিক্ষণ বা নৈতিকতা বিধিমালা প্রয়োগ কঠিন হয়ে পড়ে।
৫.২. যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার রূপরেখা: বিপিএটিসি (BPATC)-এর ভূমিকা ও নৈতিকতা শিক্ষা
বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (BPATC) সরকারি কর্মচারীগণকে যুগোপযোগী, কার্যকর, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
জনবান্ধব আমলা গড়ে তোলার জন্য BPATC-এর প্রশিক্ষণ কারিকুলামে লোক-প্রশাসন, উন্নয়ন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), জেন্ডার ও উন্নয়ন, ই-গভর্ন্যান্স, টোটাল কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট (TQM), শুদ্ধাচার (Integrity), উদ্ভাবন এবং জবাবদিহিতার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এই প্রশিক্ষণ কেবল দক্ষতা বৃদ্ধি করে না, বরং প্রশাসনিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে 5। এর মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের মাঝে ন্যায্যতা, দ্রুত কর্ম সম্পাদন এবং জনমুখী মনোভাব তৈরির চেষ্টা করা হয়।
এছাড়াও, দেশের ভবিষ্যৎ নেতা এবং নীতি নির্ধারক ও বাস্তবায়নকারীদের জন্য নেতৃত্ব গুণাবলী বিকাশে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান-দক্ষতার উপর জোর দেওয়া হয় 20। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী পুলিশ, আইনজীবী, বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট সব সেবাপ্রদানকারীকে জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করাও জনবান্ধব আমলাতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য।
৫.৩. নৈতিকতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতকরণ: আচরণবিধি ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা কঠোরভাবে প্রয়োগ
জনবান্ধব আমলাদের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা। বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিতে স্পষ্টভাবে বলা আছে যে, কোনো সরকারি কর্মচারী রাজনৈতিক দলের বা তার কোনো অঙ্গ সংগঠনের সদস্য হতে অথবা কোনোভাবে তার সহিত যুক্ত হতে পারবেন না 21। এমনকি সংসদীয় নির্বাচনে কোনো প্রকার প্রচারণা বা অন্য কোনোভাবে হস্তক্ষেপ বা প্রভাব প্রয়োগ করাও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনিক সংস্কারের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো সিভিল সার্ভিস, পুলিশ এবং বিচার বিভাগে নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আনুগত্যকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে সরকারি দায়িত্ব পালনে কঠোর রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হয়। এই কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমেই আমলাতন্ত্রে মেধা ও নিরপেক্ষতার সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
ষষ্ঠ অধ্যায়: নাগরিক-কেন্দ্রিক সেবা উদ্ভাবন ও ডিজিটাল রূপান্তর
জনবান্ধব আমলাতন্ত্র গড়ে তোলার পদ্ধতি হিসেবে পরিষেবা বিতরণকে অবশ্যই নাগরিকের অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে সাজাতে হবে, যেখানে ডিজিটাল রূপান্তর একটি মূল ভূমিকা পালন করে।
৬.১. ই-গভর্ন্যান্স ও উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনা: সেবা সহজিকরণ ও ডিজিটাইজেশন
সরকার বার্ষিক ই-গভর্ন্যান্স ও উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে সরকারি দপ্তরসমূহে প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করতে চাইছে। এই কর্মপরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো সিটিজেন চার্টারভুক্ত ন্যূনতম একটি সেবা সহজিকরণ বা ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে উদ্ভাবনী ধারণা বাস্তবায়ন করা।
বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ইতোমধ্যে Unified Financial Management System (UFMS), LGED GIS Portal, E-Procurement-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় ই-সেবাসমূহ চালু করা হয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কেন্দ্রীভূত আমলাতান্ত্রিক কাঠামোকে এড়িয়ে সরাসরি নাগরিকের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়, যা এক প্রকার কার্যকর বিকেন্দ্রীকরণের প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করে। তবে, সেবা ডিজিটাইজেশনের ক্ষেত্রে কেবল প্রযুক্তির ব্যবহার নয়, বরং প্রক্রিয়াটির সরলীকরণ ও প্রত্যাশিত সুফল নাগরিকরা পাচ্ছে কিনা, তার নিয়মিত মূল্যায়ন করা জরুরি।
৬.২. অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা (Grievance Redress System – GRS)-এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি
অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা (GRS) বাংলাদেশের সরকারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতার সংস্কৃতি তৈরি করার একটি শক্তিশালী প্রক্রিয়া। এই সিস্টেম নাগরিক এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জন্য ডেডিকেটেড কন্ট্রোল প্যানেল সরবরাহ করে এবং অভিযোগকারীকে ইমেলের মাধ্যমে প্রাপ্তি স্বীকার ও সতর্কতা প্রদান করে।
GRS এর বিস্তৃতি শুধু মন্ত্রণালয়/বিভাগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং জেলা, উপজেলা স্তর থেকে শুরু করে বিদেশে দূতাবাস পর্যন্ত এর চেইন অফ কমান্ড বিস্তৃত। এই ব্যবস্থা জনগণের কণ্ঠস্বরকে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মূল অংশে নিয়ে আসে। GRS যত বেশি কার্যকর হবে, তত দ্রুত আমলারা তাদের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য হবেন, যা জনবান্ধব সেবাকে ত্বরান্বিত করে।
৬.৩. Citizen-Centric Design: জনগণের প্রয়োজন অনুসারে সেবা প্রক্রিয়ার পুনর্গঠন
নাগরিক-কেন্দ্রিক ডিজাইন নিশ্চিত করে যে সেবা বিতরণের প্রক্রিয়া সরকারের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনীয়তার পরিবর্তে জনগণের চাহিদা মেটাচ্ছে। যদি সরকার তার নিজস্ব প্রয়োজন অনুসারে সেবা ডিজাইন করে, তবে নাগরিকরা হতাশা অনুভব করে এবং সেবার খরচও বৃদ্ধি পায়।
সেবা বিতরণে নাগরিক সন্তুষ্টি বাড়াতে এবং উন্নতির ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিতে, সরকারের উচিত নাগরিকদের অসন্তোষের মাত্রা পরিমাপ করা। এক্ষেত্রে একটি কৌশলগত দিক হলো—নাগরিকদের সরাসরি জিজ্ঞাসা না করে পরোক্ষ উপায়ে তাদের প্রয়োজন ও সমস্যা চিহ্নিত করা, যাতে তারা কোন দিকটিকে সবচেয়ে বেশি সমস্যাযুক্ত মনে করছে, তা বোঝা যায় 11। নাগরিক অসন্তোষ পরিমাপের এই প্রতিক্রিয়াটিই জনপ্রশাসনকে তার প্রক্রিয়া সহজিকরণ ও উদ্ভাবনী ধারণা বাস্তবায়নে চালিত করবে।
সপ্তম অধ্যায়: দুর্নীতি দমন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা
জনবান্ধব আমলাতন্ত্র গঠনের পথে দুর্নীতি দমন হলো সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের মতে, রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রে আমূল সংস্কার ছাড়া দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব।
৭.১. প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি মোকাবিলা: কঠোর পদক্ষেপ ও সরকারি অর্থ চুরি রোধ
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাপক মাত্রার সংগঠিত দুর্নীতি (চৌর্যতান্ত্রিকতা) দূর করতে হলে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারকে অবশ্যই কঠোরভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। এই সংগঠিত দুর্নীতি আর্থিক ও ব্যাংকিং খাত থেকে শুরু করে সরকারি ক্রয়, ঠিকাদারী ব্যবসা এবং বাজার ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত বিস্তৃত।
কমিশন দৃঢ়ভাবে সুপারিশ করেছে যে, শুধুমাত্র ভালো আইন প্রণয়ন বা দুদকের সংস্কার করেই সুফল পাওয়া যাবে না; বরং যোগসাজশের দুর্নীতি চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। এর মূল লক্ষ্য হলো সরকারি অর্থ চুরি ও আত্মসাৎ বন্ধ করা এবং বাজার-ব্যবস্থা যেন প্রতিযোগিতামূলক থাকে, তা নিশ্চিত করা, যাতে জনগণের ওপর দুর্নীতির বোঝা চাপিয়ে দেওয়া না হয়। আমলাতান্ত্রিক সংস্কার যদি কেবল নিম্ন স্তরের অনিয়ম সংশোধন করে এবং উচ্চস্তরের সিন্ডিকেটকে উপেক্ষা করে, তবে সংস্কার দীর্ঘমেয়াদে ব্যর্থ হবে। জনবান্ধব আমলাতন্ত্রের জন্য উচ্চ মাত্রার প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি দমন অপরিহার্য।
৭.২. বিশেষ বিশ্লেষণ: দুর্নীতি প্রতিরোধে জে এইচ সুমন ও জনতা নিউজ-এর ভূমিকা
দুর্নীতি দমন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার ক্ষেত্রে স্বাধীন গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রেক্ষাপটে, প্রতিবেদক জে এইচ সুমন কর্তৃক জনতা নিউজ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত আলোচনা প্রাসঙ্গিক। তিনি ‘সরকারি এবং বেসরকারি খাতে দুর্নীতি: বাস্তবসম্মত প্রতিকার এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের রোডম্যাপ’ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
এই ধরনের আলোচনা প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় বহিরাগত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো জনসচেতনতা সৃষ্টি করে এবং সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে 15। যখন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি বিদ্যমান থাকে, তখন মিডিয়া এক্সপোজার জনসচেতনতা সৃষ্টি করে এবং সরকারকে কঠোর সংস্কারে বাধ্য করে। জনবান্ধব আমলাতন্ত্রের কাঠামোতে মিডিয়াকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ ব্যবস্থা হিসেবে সুরক্ষা প্রদান করতে হবে।
৭.৩. দুর্নীতি দমন প্রক্রিয়ায় অংশীজনদের সম্পৃক্ততা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা
সংস্কারের সফলতা নির্ভর করে রাজনৈতিক শক্তির সমর্থন এবং অংশীজনদের (Stakeholders) বৃহত্তর সম্পৃক্ততার ওপর 5। অধ্যাপক ড. নুরুল হুদা সাকিব এবং সাহাবুদ্দীন আহমেদ উল্লেখ করেছেন যে, আমলাতন্ত্রের পরিবর্তন না হওয়ার একটি কারণ হলো সিভিক কালচারের অনুপস্থিতি এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ না হওয়া।
জুলাই সনদ মূলত জনগণের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত একটি ‘সামাজিক চুক্তি’, যা আমলাতান্ত্রিক সংস্কারকে একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা দিয়েছে। যদি সরকার এই সনদ দ্বারা সৃষ্ট জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয় এবং আমলাতন্ত্র আবার দলীয়করণ বা দুর্নীতিতে ডুবে যায়, তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকিতে পড়বে, কারণ জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের এই সুযোগটি আর নাও আসতে পারে।
অষ্টম অধ্যায়: জনবান্ধব আমলাতন্ত্র গঠনের মূল কৌশল ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা
জনবান্ধব আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা একটি বহু-মাত্রিক প্রক্রিয়া, যার জন্য সমন্বিত কৌশল গ্রহণ প্রয়োজন। এই কৌশলের ভিত্তি হওয়া উচিত কাঠামোগত দুর্বলতা দূর করা এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সরাসরি প্রভাব ফেলা।
৮.১. কৌশলগত স্তম্ভ ১: বিকেন্দ্রীকরণ ও জনগণের অংশগ্রহণ
ক্ষমতার অত্যধিক কেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রণ জনবান্ধব প্রশাসনের ধারণাকে ব্যাহত করে। জনবান্ধব আমলাতন্ত্রের জন্য ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করা অত্যাবশ্যক। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে সাংবিধানিক ক্ষমতা অনুযায়ী শক্তিশালী করা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম (যেমন ই-গভর্ন্যান্স ও জিআরএস) বিকেন্দ্রীকরণের একটি কার্যকরী পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা কেন্দ্রীভূত আমলাতান্ত্রিক কাঠামোকে বাইপাস করে সরাসরি জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম।
৮.২. কৌশলগত স্তম্ভ ২: মেধা, নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা
আমলাতন্ত্রে মেধা এবং রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (PSC)-এর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা আবশ্যক । নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হলে সিভিল সার্ভিস, পুলিশ ও বিচার বিভাগে নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা সহজ হবে। BPATC-এর মাধ্যমে শুদ্ধাচার, জবাবদিহিতা এবং জেন্ডার সংবেদনশীলতার উপর নিয়মিত প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে আমলাতান্ত্রিক প্রতিরোধ হ্রাস করা এবং জনকল্যাণমূলক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
৮.৩. কৌশলগত স্তম্ভ ৩: ফলাফল-ভিত্তিক সেবা বিতরণ (Outcome-Based Service Delivery)
সেবা বিতরণকে নাগরিকের প্রয়োজন অনুসারে পুনর্গঠন করা (Citizen-Centric Design) জনবান্ধবতার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। আমলাতন্ত্রের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন (KPIs) কেবল প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি দিয়ে পরিমাপ না করে, জনগণের জীবন-জীবিকার মানদণ্ডের (দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা) সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করতে হবে। ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে সেবা সহজিকরণ করা এবং GRS ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে নাগরিক অসন্তোষের প্রতিক্রিয়াকে নীতি পরিবর্তনের কাজে ব্যবহার করা অপরিহার্য।
৮.৪. কৌশলগত স্তম্ভ ৪: স্থায়ী জবাবদিহিতা কাঠামো
সংস্কারের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন। দুর্নীতি দমনকে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অংশ করা এবং সংগঠিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অতীতের ব্যর্থতা এড়াতে এবং আমলাতান্ত্রিক প্রতিরোধ ভাঙতে, সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে একটি স্থায়ী সংস্কার বাস্তবায়ন কমিশন গঠন করা জরুরি।
টেবিল ২: জনবান্ধব আমলাতন্ত্র গঠনের মূল কৌশল ও প্রত্যাশিত ফলাফল
| কৌশলের ক্ষেত্র | কার্যক্রম (Implementable Actions) | সূত্র/ধারণা |
| মেধা ও নিয়োগ (PSC Reform) | বিপিএসসি-র প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা; রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা; পরীক্ষা পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা আনা। | PSC শক্তিশালীকরণ প্রতিবেদন। |
| কাঠামোগত পরিবর্তন (Decentralization) | স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে সাংবিধানিক ক্ষমতা অনুযায়ী শক্তিশালী করা; কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা। | জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ। |
| দুর্নীতি দমন (Anti-Corruption) | উচ্চমাত্রার দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর টাস্কফোর্স গঠন; অর্থ পাচার রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা। | দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, জনতা নিউজে প্রকাশিত রোডম্যাপ। |
| ডিজিটাল সেবা (E-Governance) | সকল সিটিজেন চার্টারভুক্ত সেবা ডিজিটাইজেশন ও সহজিকরণ; GRS-এর মাধ্যমে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে সেবার মান পরিমাপ করা। | ই-গভর্ন্যান্স কর্মপরিকল্পনা, Citizen-Centric Design। |
| সাংস্কৃতিক পরিবর্তন (Ethics & Training) | সরকারি কর্মচারীদের জন্য শুদ্ধাচার, জেন্ডার সংবেদনশীলতা ও উদ্ভাবনী মনোভাবের উপর নিয়মিত প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা। | BPATC প্রশিক্ষণ কারিকুলাম, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ। |
নবম অধ্যায়: উপসংহার এবং ভবিষ্যৎ সুপারিশ
জনবান্ধব আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের সুশাসন ও স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। এটি কেবল প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয় নয়, বরং চৌর্যতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের একটি মৌলিক প্রক্রিয়া। জুলাই সনদের চেতনায় আমলাতন্ত্রের দলীয়করণ এবং সংগঠিত দুর্নীতি দূর করে মেধা, নৈতিকতা এবং জনগণের চাহিদাকে প্রাধান্য দেওয়া গেলে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে। দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য সংস্কারের ফল জনগণের দৈনন্দিন জীবনে (যেমন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার) দৃশ্যমান হওয়া জরুরি।
আমলাতন্ত্রকে অবশ্যই সাবেকি আইনগত সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে জনকল্যাণকামী ও সমাজের আর্থ-সামাজিক সমস্যার প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে।
৯.১. ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
১. সম্পদের প্রকাশ ও স্বচ্ছতা: জন-আস্থা নিশ্চিত করতে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক করার আইনি বিধান তৈরি করা উচিত। পাশাপাশি, সকল সরকারি ক্রয় ও চুক্তি প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে উন্মুক্ত করার মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
২. স্থায়ী সংস্কার পর্যবেক্ষণ: জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত স্থায়ী সংস্কার বাস্তবায়ন কমিশনকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা ও রাজনৈতিক সমর্থন প্রদান করা প্রয়োজন, যাতে তারা আমলাতান্ত্রিক প্রতিরোধের মুখেও সংস্কারের অগ্রগতি বজায় রাখতে পারে। এই কাঠামোকে অবশ্যই সরকার পরিবর্তন হলেও সংস্কারের ধারাবাহিকতা রক্ষার সাংবিধানিক ক্ষমতা দিতে হবে।
৩. সংসদীয় তদারকি শক্তিশালীকরণ: বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা রক্ষা এবং তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলোকে আরও সক্রিয় ও ক্ষমতাশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। এটি নির্বাহী বিভাগের মাইক্রো-ম্যানেজমেন্ট থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুক্ত রাখবে।
৪. জনগণের মতামতকে নীতিতে রূপান্তর: জিআরএস এবং নাগরিক সন্তুষ্টি পরিমাপ থেকে প্রাপ্ত প্রতিক্রিয়াকে কেবল তথ্য হিসেবে না দেখে, সেবার মান এবং প্রশাসনিক নীতি সংস্কারের মূল চালক হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।
