জৈন ধর্মের বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও ইতিহাস

জৈন ধর্ম: উৎপত্তি, ইতিহাস, দার্শনিক ভিত্তি এবং আধুনিক প্রেক্ষাপটে নৈতিকতার সংগ্রাম

প্রতিবেদক: জে এইচ সুমন (জনতা নিউজ ম্যাগাজিন)


১. মুখবন্ধ ও সূচনা: জৈন ধর্মের চিরন্তনতা এবং তাৎপর্য

জৈন ধর্ম ভারতের প্রাচীনতম আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যগুলির মধ্যে অন্যতম, যা খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের অনেক পূর্ব থেকেই বিদ্যমান বলে দাবি করা হয় । এই ধর্ম একটি একক ঐতিহাসিক প্রবর্তকের মাধ্যমে শুরু হয়নি; বরং এটি বহু যুগ ধরে চব্বিশজন তীর্থঙ্কর-এর (Ford-maker বা মুক্তির পথ নির্মাতা) ধারাবাহিক শিক্ষার ওপর প্রতিষ্ঠিত । তীর্থঙ্করগণ হলেন সেই আধ্যাত্মিক শিক্ষক, যাঁরা মহাবিশ্বের প্রতিটি চক্রে আবির্ভূত হয়ে মানব সমাজকে জন্ম ও মৃত্যুর চক্র (সংসার) থেকে মুক্তির পথ দেখান ।   

এই তীর্থঙ্কর পরম্পরায় প্রথম গুরু হলেন ঋষভনাথ, যিনি ‘আদিনাথ ভগবান’ নামেও পরিচিত। জৈন ধর্ম বিশ্বাস করে যে ঋষভনাথ লক্ষ লক্ষ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যা এই ধর্মকে বৈদিক ধর্মের চেয়েও প্রাচীনত্বের দাবিদার করে তোলে । এই পরম্পরার সর্বশেষ দুই তীর্থঙ্কর, ত্রয়োবিংশ পার্শ্বনাথ (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ অব্দ) এবং চতুর্বিংশ তীর্থঙ্কর বর্ধমান মহাবীর (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দ) । মহাবীর এই দূরবর্তী প্রাক-বৈদিক যুগের আধ্যাত্মিক শিক্ষাগুলিকে ব্যাখ্যা করে জৈন ধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন । জৈন ঐতিহ্য এই শিক্ষাকে একটি চিরন্তন ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করে, যা সময়ের শুরু থেকেই প্রবাহিত । এই দৃষ্টিভঙ্গি জৈন ধর্মকে কেবল খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের প্রতিবাদী আন্দোলন হিসেবে না দেখে, বরং ভারতীয় সভ্যতার একটি আদিম ও মৌলিক প্রবাহ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।   

জৈন ধর্মের মৌলিক নীতিগুলি আজও বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এর প্রধান নীতিগুলি হলো অহিংসা (অহিংসা), অনেকান্তবাদ (বহুত্ববাদী বাস্তবতা), অপরিগ্রহ (ভোগে অনাসক্তি), এবং সন্ন্যাস (ইন্দ্রিয় সংযম) । এই নীতিগুলি কেবল আধ্যাত্মিক মুক্তি নয়, বরং একটি সহনশীল ও নৈতিক সমাজের ভিত্তি তৈরি করে। বিশেষ করে অনেকান্তবাদ, যা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির আংশিক সত্যতা স্বীকার করে, তা আধুনিক বহুত্ববাদী সমাজে দার্শনিক সহিষ্ণুতা এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপন করেছে ।   


২. উৎসের সন্ধান: শ্রমণ ঐতিহ্য এবং প্রতিবাদী প্রেক্ষাপট

২.১. প্রাচীন ভারতে প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের প্রেক্ষাপট

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে এক গভীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় পরিবর্তনের যুগ। এই সময়েই নব্যধর্ম আন্দোলন বা প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের উত্থান ঘটে, যার ফলে জৈন ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্মসহ প্রায় ৬৩টি নতুন ধর্মমতের আবির্ভাব হয়েছিল । এই আন্দোলনের মূল কারণ ছিল তৎকালীন বৈদিক ব্রাহ্মণ্য ধর্মের জটিলতা, দুর্নীতি এবং কঠোরতা ।   

পরবর্তী বৈদিক যুগে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা হ্রাস পেতে শুরু করে । বৈদিক ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলি ছিল ব্যয়বহুল যাগযজ্ঞ-সর্বস্ব এবং এতে বিপুল সংখ্যক পশুবলি দেওয়া হতো । এছাড়া, কঠোর জাতিভেদ প্রথার কারণে শূদ্র ও নারীরা ধর্মচর্চা থেকে বঞ্চিত হতো, যা সমাজে ব্যাপক বৈষম্য ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল । এই পরিস্থিতিতে, সাধারণ মানুষ এক সরল ধর্মের প্রত্যাশা করছিল । উপনিষদের বাণী, যেখানে যাগযজ্ঞ ও আচার অনুষ্ঠানের বদলে সরল ধর্মচিন্তা ও জ্ঞানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, তা এই নতুন আন্দোলনের জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল ।   

২.২. শ্রমণ আন্দোলন: বৈদিক কর্তৃত্বের প্রত্যাখ্যান

জৈন ধর্মের উৎস নিহিত আছে শ্রমণ (Śramaṇa) নামক প্রাচীন ভারতীয় ধর্মীয় ঐতিহ্যে । খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ থেকে ৬০০ অব্দের মধ্যে এই আন্দোলন বৈদিক ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভিন্ন পথে যাত্রা শুরু করে । শ্রমণ শব্দের অর্থ হলো ‘সন্ধানকারী’ বা ‘শ্রমশীল’, এবং এই প্রথার অনুগামীরা জাগতিক জীবন, বিবাহ ও গৃহস্থালী ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক মুক্তির সন্ধানে কঠোর, কৃচ্ছ্রসাধনের (Ascetic) জীবনযাপন করত ।   

শ্রমণরা ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণ্যবাদের পুরোহিতদের (ব্রাহ্মণ) কর্তৃত্বকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং বেদের প্রামাণ্যতা অস্বীকার করেছিল । তারা মুক্তির জন্য ব্যক্তিগত তপস্যা, আত্ম-সংযম এবং কঠোর নৈতিক আচরণের উপর জোর দিয়েছিল। আধুনিক হিন্দুধর্মকে একদিকে বৈদিক এবং অন্যদিকে শ্রমণ—এই দুই ধারার সমন্বয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় । এই শ্রমণ ঐতিহ্য থেকেই যোগ, জৈন ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম এবং ভারতীয় ধর্মের মূল ধারণাগুলি, যেমন সংসার (জন্ম-মৃত্যুর চক্র) এবং মোক্ষ (মুক্তি), উদ্ভূত হয়েছে ।   

২.৩. জৈন ধর্মের স্বতন্ত্র কঠোরতা ও রাজনৈতিক সমর্থন

জৈন ধর্ম এবং বৌদ্ধ ধর্ম, উভয়ই শ্রমণ ঐতিহ্য থেকে উদ্ভূত হলেও, মুক্তির পথ নিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য ছিল । যদিও উভয় ধর্মই নিরীশ্বরবাদী ছিল এবং বেদের কর্তৃত্ব অস্বীকার করত , জৈন ধর্ম অহিংসা নীতি পালনে অত্যাধিক কঠোরতা অবলম্বন করে। বৌদ্ধ ধর্ম দেহকে কষ্ট দিয়ে মুক্তি লাভের চেষ্টাকে সমর্থন করেনি; কিন্তু মহাবীর কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন ও তপস্যার মাধ্যমে মোক্ষ অর্জনের পথ দেখান । গৌতম বুদ্ধ সকল জীবের প্রতি অহিংস নীতি গ্রহণের কথা বললেও, জৈন ধর্মের মতো অহিংস নীতি পালনে কঠোর হওয়ার কথা বলেননি ।   

শ্রমণ আন্দোলনের উত্থান তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। যদিও শ্রমণরা নিজেরা কোনো সামাজিক কর্মসূচি ঘোষণা করেনি, কিন্তু ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে তাদের ভাবধারা ভারতের বিভিন্ন রাষ্ট্রের শাসকদের সমর্থন লাভে সহায়তা করেছিল । এই শাসকগণ প্রায়শই ব্রাহ্মণ্য-শিক্ষাপুষ্ট জাতি ও বর্ণভিত্তিক অনৈক্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীকরণের নীতি প্রবর্তন করতে চাইছিলেন। অন্যদিকে, বণিক এবং ব্যাঙ্কার শ্রেণী, যাদের জন্য বৈদিক যাগযজ্ঞ ব্যয়বহুল ছিল এবং জাতিভেদ প্রথা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করত, তারা ব্রাহ্মণ্য আধিপত্যমুক্ত জৈন ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয় । এই আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক সমর্থনই জৈন ধর্মকে উত্তর ভারত থেকে শুরু করে দাক্ষিণাত্য পর্যন্ত দ্রুত প্রসারিত হতে সাহায্য করেছিল ।   


৩. প্রথম তীর্থঙ্কর ঋষভনাথ (আদিনাথ): জীবনী, লোক-সংস্কৃতি ও যুগ-প্রবর্তনা

জৈন পরম্পরা অনুসারে, ঋষভনাথ (যিনি আদিনাথ, আদिश्वর, যুগদেব এবং নাভেয় নামেও পরিচিত) বর্তমান মহাজাগতিক চক্রের (Avsarpini) প্রথম তীর্থঙ্কর এবং জৈন ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে সম্মানিত হন ।   

৩.১. রাজকীয় জীবন ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা

ঋষভনাথের জন্ম হয়েছিল অযোধ্যার রাজা নাভি এবং রানি মরুদেবীর ঘরে । তাঁর জন্ম উপলক্ষে মাতা মরুদেবী ১৪টি শুভ স্বপ্ন দেখেছিলেন বলে জৈনরা বিশ্বাস করে । তাঁর অযোধ্যায় জন্ম এই নগরীকে জৈনদের কাছেও পবিত্র স্থানে পরিণত করেছে ।   

তীর্থঙ্কর হিসেবে আধ্যাত্মিক মুক্তির পথ দেখানোর পাশাপাশি, ঋষভনাথকে এই যুগের সাংস্কৃতিক প্রবর্তক (Culture Hero) হিসেবে দেখা হয় । ঐতিহ্য অনুসারে, তিনিই মানব সমাজে জীবনের প্রাথমিক ভিত্তি স্থাপন করেন। তিনি বিনীত নগর (যা অযোধ্যা নামে পরিচিত) প্রতিষ্ঠা করে প্রথম রাজধানী স্থাপন করেন এবং একজন রাজা কীভাবে শাসন করবেন, তার জন্য প্রথম আইন প্রণয়ন করেন ।   

সামাজিক কাঠামোর ক্ষেত্রেও ঋষভনাথকে পথিকৃৎ মনে করা হয়। তিনি কর্মের ভিত্তিতে প্রাথমিক ত্রিবর্ণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন, যা ক্ষত্রিয় (যোদ্ধা), বৈশ্য (বণিক) এবং শূদ্র (শ্রমিক/কারিগরি) নিয়ে গঠিত ছিল। জৈন দাবি অনুসারে, পরবর্তীতে তাঁর পুত্র ভরত এই ব্যবস্থায় ব্রাহ্মণ নামক চতুর্থ বর্ণটি যুক্ত করেন ।   

শিক্ষা ক্ষেত্রেও ঋষভনাথের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি পুরুষদের জন্য ৭২টি বিজ্ঞান এবং নারীদের জন্য ৬৪টি বিজ্ঞান শিক্ষা দেন । তাঁর কন্যা ব্রহ্মীকে তিনি ব্রাহ্মী লিপি এবং সুন্দরী-কে সংখ্যাশাস্ত্র (science of numbers) শিক্ষা দিয়েছিলেন । এছাড়া, আগুন ব্যবহার, রন্ধন পদ্ধতি এবং বিবাহ প্রথার সূচনাও তাঁর দ্বারা হয়েছিল বলে মনে করা হয় । এই সমস্ত আখ্যান জৈন ধর্মকে কেবল একটি আধ্যাত্মিক মতবাদ হিসেবে নয়, বরং ভারতীয় সভ্যতার মূল উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।   

৩.২. সন্ন্যাস গ্রহণ এবং নির্বাণ

ঋষভনাথের জীবনের মোড় ঘুরে যায় যখন তিনি নীলাঞ্জনা নামক এক নর্তকীর আকস্মিক মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেন। এই ঘটনা তাঁকে জাগতিক জীবনের পরিবর্তনশীলতা এবং ক্ষণস্থায়ীতা উপলব্ধি করায়, যার ফলে তিনি রাজকীয় ঐশ্বর্য ত্যাগ করে সন্ন্যাসী জীবন গ্রহণ করেন ।   

সন্ন্যাসী হওয়ার পর, ঋষভনাথ কঠোর তপস্যা শুরু করেন। জৈন ধর্মগ্রন্থ আদি পুরাণ-এ তাঁর জীবন ও শিক্ষাগুলি লিপিবদ্ধ আছে । বলা হয়, তিনি প্রায় এক বছর ধরে খাদ্য গ্রহণ না করেই পরিভ্রমণ করেছিলেন। যেদিন তিনি প্রথম খাদ্য গ্রহণ করেন, সেই দিনটি জৈনরা অক্ষয় তৃতীয়া উৎসব হিসেবে পালন করে ।   

জীবনের চূড়ান্ত পর্যায়ে, তিনি অষ্টাপদ (যা কৈলাস পর্বত নামেও পরিচিত) পর্বতে মোক্ষ বা নির্বাণ লাভ করেন । জৈনরা বিশ্বাস করে, এই মোক্ষ লাভের মাধ্যমে তাঁর আত্মা জন্ম-মৃত্যুর অনন্ত চক্র থেকে চিরন্তন মুক্তি লাভ করেছিল । তাঁর প্রতীক হলো বৃষ (Bull) ।   

Table 1: ঋষভনাথের (আদিনাথ) মানব সমাজ ও সংস্কৃতিতে অবদান

ক্ষেত্র প্রবর্তিত বা শিক্ষাপ্রাপ্ত বিষয় সূত্র
নগর ও শাসন বিনীত নগর (অযোধ্যা) প্রতিষ্ঠা, রাজত্বের প্রথম আইন প্রণয়ন
সামাজিক কাঠামো প্রাথমিক ত্রিবর্ণ (ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র) ব্যবস্থা প্রবর্তন
শিক্ষা (নারী) ব্রাহ্মী লিপি ও সংখ্যাশাস্ত্র (কন্যা ব্রহ্মী ও সুন্দরী-কে শিক্ষা)
ব্যবহারিক জ্ঞান আগুন ব্যবহার, রন্ধন পদ্ধতি, ৭২ প্রকার বিজ্ঞান

 


৪. জৈন ধর্মের মূল দার্শনিক ভিত্তি: দ্রব্য, জীব ও কর্মতত্ত্ব

জৈন দর্শন মূলত মোক্ষশাস্ত্র। এই ধর্ম একটি ঈশ্বর-নিরপেক্ষতাবাদী ধর্ম, যেখানে মহাবিশ্বকে দ্বৈতবাদের নীতি মেনে চিরন্তনভাবে বিকশিত হতে দেখা যায় । এই দার্শনিক কাঠামো ছয়টি চিরন্তন দ্রব্য বা সারবস্তুর ওপর প্রতিষ্ঠিত।   

৪.১. মহাবিশ্ব এবং দ্রব্যের ধারণা

জৈন দর্শন অনুযায়ী, মহাবিশ্ব দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: চেতন সত্ত্বা বা জীব (আত্মা) এবং পাঁচটি অজীব (জড় পদার্থ) । পাঁচটি অজীব হলো: পুদ্গল (বস্তু বা পদার্থ), ধর্ম (গতির মূলসূত্র), অধর্ম (বিরামের মূলসূত্র), আকাশ (মহাশূন্য) এবং কাল (সময়) ।   

আত্মা (জীব) স্বভাবত অনন্ত জ্ঞান, অনন্ত শক্তি এবং অনন্ত আনন্দের অধিকারী। এটি মুক্ত অবস্থায় বিশুদ্ধ, কিন্তু জাগতিক আত্মা কার্মিক পুদ্গল দ্বারা আবৃত থাকার কারণে সীমিত জ্ঞান, শক্তি এবং সুখ-দুঃখ ভোগ করে, যার ফলে তা জন্ম-মৃত্যুর চক্রে (সংসার) আবদ্ধ থাকে ।   

৪.২. কর্মতত্ত্ব: সূক্ষ্ম বস্তুর বন্ধন (কার্মিক পুদ্গল)

জৈন ধর্মের কর্মতত্ত্বটি অত্যন্ত স্বতন্ত্র, কারণ এটি কর্মকে একটি সূক্ষ্ম, সংবেদনাতীত বস্তু বা কার্মিক পুদ্গল (Karmic Matter) হিসেবে বিবেচনা করে । এই কার্মিক পদার্থগুলি মহাবিশ্বের সর্বত্র বিরাজমান এবং অনাদিকাল থেকে প্রতিটি জীবের আত্মাকে আবৃত করে রেখেছে ।   

এই কার্মিক পদার্থই আত্মার স্বাভাবিক গুণাবলীকে অবদমিত করে এবং আত্মাকে তার প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধিতে বাধা দেয় । কর্মের এই বস্তুবাদী ধারণাটি জৈন নৈতিক আচরণের ভিত্তি স্থাপন করে। কর্মকে বস্তু হিসেবে দেখার ফলেই জৈনরা বিশ্বাস করে যে আত্মাকে মুক্তি দিতে হলে এই সূক্ষ্ম বস্তুকে আটকাতে হবে (আস্রব এবং বন্ধন রোধ করে সংবর বা কর্মের প্রবাহ রোধ) এবং জমে থাকা কর্মগুলিকে তপস্যার মাধ্যমে ঝেড়ে ফেলতে হবে (নির্જરા) ।   

জৈন কর্মতত্ত্ব ব্যক্তির কাজের উপর চরম দায়ভার আরোপ করে। এখানে কোনো ঐশ্বরিক বিচার বা দৈব অনুগ্রহের স্থান নেই । আত্মা সচেতন বা অসচেতনভাবে নেওয়া অতীতের সিদ্ধান্তের স্বাভাবিক পরিণতিস্বরূপ বর্তমান জীবনে সুখ-দুঃখ ভোগ করে। এই কারণেই জৈন ধর্ম বিশুদ্ধ চিন্তাভাবনা এবং নৈতিক আচরণের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করে । কর্মের এই বস্তুবাদী ব্যাখ্যাই জৈন সাধকদের মধ্যে শারীরিক কৃচ্ছ্রসাধনের কঠোরতা এবং অহিংসা নীতির অতি সতর্ক পালনের কারণ হিসেবে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, শ্বাস-প্রশ্বাসে যেন ক্ষুদ্র প্রাণী হত্যা না হয়, তার জন্য সাধুদের নাকে কাপড় ব্যবহার এবং বর্ষাকালে ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় ।   


৫. নৈতিক আদর্শ ও মুক্তির পথ: ত্রিরত্ন এবং পঞ্চ-মহাব্রত

জৈন দর্শনে মোক্ষকে চূড়ান্ত পুরুষার্থ এবং নৈতিক আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা হয় । এই আদর্শে পৌঁছানোর পথটি অত্যন্ত দুর্গম এবং ত্রিরত্ন ও পঞ্চ-মহাব্রত পালনের ওপর নির্ভরশীল।   

৫.১. মোক্ষ লাভের সমন্বিত পথ: ত্রিরত্ন

মোক্ষ লাভের জন্য জৈন দর্শনে চিত্তশুদ্ধির তিনটি প্রধান পদ্ধতিকে একত্রিতভাবে ত্রিরত্ন (Three Jewels) বলা হয়: সম্যক দর্শন (Right Faith), সম্যক জ্ঞান (Right Knowledge) এবং সম্যক চরিত্র (Right Conduct) । জৈনমতে, এই তিনটি রত্ন অবশ্যই একত্রে থাকতে হবে, ঠিক যেমন চিকিৎসায় সফলতার জন্য ওষুধের কার্যকারিতায় বিশ্বাস, তার ব্যবহার বিধি এবং তার প্রয়োগ—এই তিনটি একসাথে প্রয়োজন ।   

১. সম্যক দর্শন (Samyak Darshan): এটি জৈন দর্শনের ভিত্তিস্বরূপ। এর অর্থ তীর্থঙ্করদের উপদেশে শ্রদ্ধাপূর্ণ, কিন্তু বিচারযুক্ত বিশ্বাস । এই বিশ্বাসকে অবিচল রাখতে হলে মানুষকে তিন প্রকার কুসংস্কার বা ত্রিবিধ মূঢ়—যেমন, লোক মূঢ় (লৌকিক বিশ্বাস), দেব মূঢ় (দেবতার শক্তিতে বিশ্বাস) এবং পাষণ্ডী মূঢ় (ভণ্ড সাধুদের উপদেশে বিশ্বাস) থেকে মুক্ত থাকতে হবে । ২. সম্যক জ্ঞান (Samyak Jnana): এটি আত্মজ্ঞানকে বোঝায়। আত্মা বা জীবের স্বরূপ সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান লাভই সম্যক জ্ঞান । কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ থাকলে জ্ঞান অপ্রকাশিত থাকে; কর্মের বন্ধন থেকে মুক্তি পেলেই এই জ্ঞান লাভ হয় । ৩. সম্যক চরিত্র (Samyak Charitra): মোক্ষলাভের সহায়ক কাজ বা নৈতিক বিধি পালনকে সম্যক চরিত্র বলা হয়। এটি অর্জনের জন্য পঞ্চ-মহাব্রত কঠোরভাবে পালন করা আবশ্যক ।   

ত্রিরত্নের মধ্যে সম্যক দর্শনকে ভিত্তিস্বরূপ গণ্য করার মাধ্যমে জৈন ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে যে, মুক্তির জন্য কেবল কঠোর আচরণ বা তথ্যগত জ্ঞানই যথেষ্ট নয়; বরং প্রথমে সেই সত্যের প্রতি যুক্তিনির্ভর বিশ্বাস থাকা অপরিহার্য।

৫.২. নৈতিক বিধি: পঞ্চ-মহাব্রত

মোক্ষকামী সন্ন্যাসীদের জন্য মহাবীর যে কঠোর নৈতিক বিধিগুলি প্রচার করেছিলেন, তা পঞ্চ-মহাব্রত নামে পরিচিত । মহাবীর ২৩তম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ কর্তৃক প্রবর্তিত চতুর্যাম (অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, অপরিগ্রহ)-এর সঙ্গে ব্রহ্মচর্য আদর্শটি যুক্ত করে এই পাঁচটি মহাব্রত প্রবর্তন করেন । সাধারণ মানুষের জন্য এই ব্রতগুলি তুলনামূলকভাবে শিথিলভাবে অনুব্রত নামে পরিচিত, তবে সন্ন্যাসীদের জন্য এইগুলি মহাব্রত আকারে কঠোরভাবে পালিত হয় ।   

১. অহিংসা ব্রত (Ahimsa): এটি জৈন ধর্মের মূল নীতি। অহিংসা মানে কেবল হিংসা ত্যাগ নয়, বরং সকল প্রকার জীবের প্রতি প্রেম করা । জৈন মতে, গতিশীল জীব ছাড়াও পৃথিবী, বায়ু, জল ইত্যাদির মতো স্থাবর দ্রব্যেও জীবের নিবাস রয়েছে । তাই মন, বাক্য ও কর্ম—ত্রিক্ষেত্রে সকল জীবের (চর ও অচর) প্রতি হিংসা পরিত্যাগ করাই অহিংসা ব্রত । জৈন সন্ন্যাসীরা এই ব্রত পালনে চরম নিষ্ঠা দেখান, যাতে অজান্তেও কোনো প্রাণীর অনিষ্ট না হয় । ২. সত্য ব্রত (Satya/Sunrita): অসত্যের পরিত্যাগ এবং সততা বজায় রাখা । ৩. অস্তেয় ব্রত (Asteya): চুরি না করা, অর্থাৎ অন্যের সম্পদ বা বস্তু হরণ না করা । ৪. ব্রহ্মচর্য ব্রত (Brahmacharya): যৌন-সংযম বা ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ, যা মহাবীর চতুর্যামের সঙ্গে যুক্ত করেন । ৫. অপরিগ্রহ ব্রত (Aparigraha): জাগতিক ভোগ সামগ্রী এবং সম্পত্তির প্রতি অনাসক্তি ।   

Table 2: জৈন ধর্মের ত্রিরত্ন (Triple Gems) ও পঞ্চ-মহাব্রত (Five Great Vows)

বিভাগ নীতি/ব্রত সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা সূত্র
ত্রিরত্ন (মোক্ষের উপায়) সম্যক দর্শন (Right Faith) তীর্থঙ্করদের উপদেশে শ্রদ্ধাপূর্ণ, যুক্তিনির্ভর বিশ্বাস
সম্যক জ্ঞান (Right Knowledge) আত্মার স্বরূপ সম্বন্ধে যথার্থ জ্ঞান (সর্বজ্ঞতা)
সম্যক চরিত্র (Right Conduct) মোক্ষলাভের সহায়ক কঠোর নৈতিক আচরণ
পঞ্চ-মহাব্রত (চরিত্র) অহিংসা সকল জীবের প্রতি হিংসা থেকে বিরত থাকা (মন, বাক্য ও কর্মে)
সত্য (সুনৃত) অসত্যের পরিত্যাগ, সততা
অস্তেয় চুরি না করা, পরস্ব হরণ না করা
ব্রহ্মচর্য যৌন-সংযম বা ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ
অপরিগ্রহ সম্পত্তি বা জাগতিক ভোগ সামগ্রীর প্রতি অনাসক্তি

 


৬. জৈন জ্ঞানতত্ত্বের স্তম্ভ: অনেকান্তবাদ ও স্যাদ্বাদ

জৈন ধর্মের নৈতিক অহিংসার নীতিকে শুধুমাত্র শারীরিক ক্ষেত্র থেকে বৌদ্ধিক ও দার্শনিক ক্ষেত্রে প্রসারিত করার উদ্দেশ্যেই দুটি গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানতাত্ত্বিক নীতি তৈরি হয়েছে: অনেকান্তবাদ এবং স্যাদ্বাদ। এই মতবাদ দুটি দার্শনিক সহিষ্ণুতার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে ।   

৬.১. অনেকান্তবাদ: বাস্তবতার বহু-পার্শ্বিকতা

অনেকান্তবাদ (Anekantavada) বলতে বোঝায় “বহু-পার্শ্বিকতার মতবাদ” । এটি জৈন দর্শনের মূল ভিত্তিগুলির অন্যতম এবং দৃঢ়ভাবে এক বা অদ্বিতীয় চরম সত্যের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে । অনেকান্তবাদের মূল দাবি হলো, বাস্তবতা অত্যন্ত জটিল ও বহু-মাত্রিক এবং কোনো একক, চূড়ান্ত দৃষ্টিকোণ থেকে এর সম্পূর্ণ স্বরূপ জানা সম্ভব নয় ।   

জৈন দার্শনিকদের মতে, সৎ বস্তু বা সত্তা অতি জটিল। মানুষ বা সাধারণ জ্ঞান সীমিত ও খণ্ডিত (একদেশদর্শী) হওয়ার কারণে শুধুমাত্র আপেক্ষিক দৃষ্টিকোণ থেকে বস্তুর আংশিক স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারে । তাই আপাতদৃষ্টিতে পরস্পরবিরোধী বা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিগুলিও একই বাস্তবতার আংশিক সত্যকে প্রকাশ করে । এই মতবাদটি ‘নয়’ (naya) নামক ধারণার প্রবর্তন করে, যা প্রতিটি বিবৃতি একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে সত্য বলে মনে করে । এই দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিটি বৌদ্ধিক অহিংসা (Intellectual Ahimsa) প্রচার করে, যা ভিন্ন মতবাদের প্রতি সম্মান ও সহনশীলতার ভিত্তি তৈরি করে ।   

৬.২. স্যাদ্বাদ: আপেক্ষিক সত্যের যৌক্তিক প্রকাশ (সপ্তভঙ্গী)

স্যাদ্বাদ (Syadvada) হলো অনেকান্তবাদের একটি যৌক্তিক সম্প্রসারণ, যাকে “সাপেক্ষ প্রতিজ্ঞার মতবাদ” বলা হয় । এটি মূলত ভাষাগত কাঠামো প্রদান করে, যার মাধ্যমে বহুমুখী বাস্তবতাকে প্রকাশ করা সম্ভব । পণ্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে, এই মতবাদ গ্রীক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দার্শনিক মত-সংঘর্ষের প্রভাবে খ্রিস্টাব্দের শুরুতে সুব্যবস্থিত হয় ।   

স্যাদ্বাদের কেন্দ্রীয় ধারণা হলো, মানুষের জ্ঞান আপেক্ষিক এবং প্রতিটি উক্তিই সম্ভাব্য (Conditional)। তাই যেকোনো সত্তা বা ঘটনা সম্পর্কে উক্তি করার সময় ‘স্যাৎ’ (Syad) শব্দটি ব্যবহার করা আবশ্যক, যার অর্থ “কোনোভাবে সম্ভব” বা “কিছু দিক থেকে” । এটি জ্ঞানের শর্তাধীন প্রকৃতিকে প্রকাশ করে ।   

স্যাদ্বাদ সাতটি প্রতিজ্ঞা বা সপ্তভঙ্গী তত্ত্বের মাধ্যমে বাস্তবতার আপেক্ষিকতা প্রকাশ করে: ১. স্যাৎ অস্তি (কোনো দিক থেকে আছে)। ২. স্যাৎ নাস্তি (কোনো দিক থেকে নেই)। ৩. স্যাৎ অস্তি নাস্তি (কোনো দিক থেকে আছে এবং নেই)। ৪. স্যাৎ অবক্তব্যম (কোনো দিক থেকে অকথ্য)। ৫. স্যাৎ অস্তি অবক্তব্যম (কোনো দিক থেকে আছে এবং অকথ্য)। ৬. স্যাৎ নাস্তি অবক্তব্যম (কোনো দিক থেকে নেই এবং অকথ্য)। ৭. স্যাৎ অস্তি নাস্তি অবক্তব্যম (কোনো দিক থেকে আছে, নেই এবং অকথ্য) ।   

স্যাদ্বাদ দ্বারা জৈনরা উপনিষদীয় দর্শনের নিত্যতা এবং বৌদ্ধ দর্শনের অনিত্যতা—উভয় মতকেই আংশিক সত্য হিসেবে স্বীকার করে এক মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে পেরেছে । অনেকান্তবাদ তত্ত্বীয় ভিত্তি সরবরাহ করে, আর স্যাদ্বাদ তার প্রয়োগের পদ্ধতি দেয় । এই জ্ঞানতাত্ত্বিক নমনীয়তা জৈন ধর্মকে হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম এবং অন্যান্য ঐতিহ্যগুলির সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে সাহায্য করেছে, যা বহু শতাব্দী ধরে তার টিকে থাকার একটি প্রধান কারণ ।   

Table 3: অহিংসা ও জ্ঞানতত্ত্বের সংযোগ

নীতি মূল ক্ষেত্র জৈন দর্শনে তার সম্প্রসারণ ফলাফল
অহিংসা (শারীরিক) পঞ্চ-মহাব্রত, কৃচ্ছ্রসাধন সকল জীবের জীবন রক্ষা (চর ও অচর) কঠোর নিরামিষ ভোজন, সন্ন্যাসীর মুখ বস্ত্রধারণ
অহিংসা (বৌদ্ধিক) অনেকান্তবাদ, স্যাদ্বাদ সকল দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামতের আংশিক সত্যতা স্বীকার করা দার্শনিক সহিষ্ণুতা, আপেক্ষিক সত্যের প্রতিষ্ঠা

 


৭. ঐতিহাসিক কালক্রম ও প্রাতিষ্ঠানিক বিবর্তন

৭.১. মহাবীর পরবর্তী ধর্মপ্রসার ও পৃষ্ঠপোষকতা

মহাবীর আনুমানিক ৫২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে (অথবা ৪৬৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে) মোক্ষ লাভ করার পর জৈন ধর্ম দ্রুত ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে । প্রথমদিকে, জৈন ধর্ম কিছু রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলেও, উত্তর ভারতে এটি দ্রুত সেই সমর্থন হারায়। তবে এটি প্রধানত মধ্যবিত্ত শ্রেণী, বিশেষত বণিক (Merchant) ও ব্যাঙ্কারদের কাছ থেকে দীর্ঘকাল ধরে সমর্থন পেয়েছিল, যা এর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে । খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর মধ্যে জৈন ধর্ম ভারতে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । খ্রিস্টীয় ৮ম থেকে ১২শ শতক জৈন ধর্মের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ হিসেবে পরিচিত, যখন জৈন পণ্ডিত ও রাষ্ট্রনেতারা এই ধর্মের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন ।   

৭.২. জৈন সংগীতি ও আগম শাস্ত্রের সংকলন

মহাবীরের শিক্ষার সংকলনকে আগম গ্রন্থ বলা হয় । প্রাকৃত ভাষায় (বিশেষ করে অর্ধমাগধী) রচিত এই আগম শাস্ত্র সংরক্ষণের জন্য কয়েকটি জৈন সংগীতির আয়োজন করা হয়েছিল ।   

১. প্রথম সংগীতি: এটি পাটলিপুত্রে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং স্থূলভদ্র এর নেতৃত্ব দেন । এখানেই মহাবীরের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে পবিত্র গ্রন্থগুলি সজ্জিত করা হয়। তবে এই সংগীতির ফলস্বরূপ দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর বিভাজনের সূত্রপাত হয় । ২. দ্বিতীয় সংগীতি: এটি একই সময়ে বল্লভী (গুজরাট) এবং মথুরা (উত্তর প্রদেশ)-তে অনুষ্ঠিত হয় । ৩. তৃতীয় সংগীতি (বল্লভী): এটি দেবরধী ক্ষমারামণের (Devarddhigani Kshamashramana) সভাপতিত্বে বল্লভীতে অনুষ্ঠিত হয় (আনুমানিক মহাবীরের নির্বাণের ৯৮০ বা ৯৯৩ বছর পর)। এই সংগীতিতেই দ্বাদশ অঙ্গ ও দ্বাদশ উপাঙ্গের চূড়ান্ত সংকলন সম্পন্ন হয় । তবে দ্বাদশ অঙ্গটি হারিয়ে যাওয়ায় কেবল ১১টি অঙ্গ সংকলিত হয়েছিল ।   

এই সংগীতির মাধ্যমে শাস্ত্র সংকলন করা হলেও, দ্বাদশ অঙ্গের এই হারিয়ে যাওয়াটি দিগম্বর ও শ্বেতাম্বরদের মধ্যে শাস্ত্রের প্রামাণ্যতা নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি করে, যা তাদের বিভেদকে আরও স্থায়ী করে তোলে। দিগম্বররা বিশ্বাস করে যে মূল আগম শাস্ত্র চিরতরে হারিয়ে গেছে, তাই শ্বেতাম্বরদের সংকলিত পাঠের সম্পূর্ণ প্রামাণ্যতা তারা স্বীকার করে না ।   

৭.৩. দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর বিভাজন

মহাবীরের মৃত্যুর কয়েক শতাব্দী পর, জৈন সম্প্রদায় দুটি প্রধান শাখায় বিভক্ত হয়: দিগম্বর (Digambara, আকাশ পরিধানকারী) ও শ্বেতাম্বর (Śvetāmbara, শ্বেতবস্ত্র পরিধানকারী) । এই বিভাজনের মূলে ছিল কঠোর কৃচ্ছ্রসাধনের নিয়ম এবং ধর্মগ্রন্থের প্রামাণ্যতার বিতর্ক ।   

প্রথম সংগীতির সময় মগধে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে ভদ্রবাহুর নেতৃত্বে একদল সন্ন্যাসী দক্ষিণ ভারতে (কর্ণাটক) চলে যান, যারা কঠোর নগ্নতা বজায় রেখে দিগম্বর নামে পরিচিত হন। অন্যদিকে, স্থূলভদ্রের নেতৃত্বে যারা মগধে থেকে যান, তারা সাদা পোশাক পরিধান শুরু করেন এবং শ্বেতাম্বর নামে পরিচিত হন ।   

এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ:

Table 4: দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর সম্প্রদায়ের প্রধান পার্থক্যসমূহ

পার্থক্যের ক্ষেত্র দিগম্বর (Digambara) শ্বেতাম্বর (Śvetāmbara) সূত্র
সন্ন্যাসীর পোশাক সম্পূর্ণ উলঙ্গ (আকাশ বস্ত্র)। সাদা পোশাক পরিধানকারী।
নারীর মুক্তি নারীর মোক্ষ সম্ভব নয়; মুক্তির জন্য পুরুষ রূপে জন্ম নিতে হবে। কঠোর তপস্যার মাধ্যমে নারীর মোক্ষ সম্ভব।
মাল্লীনাথের লিঙ্গ পুরুষ তীর্থঙ্কর। নারী তীর্থঙ্কর (১৯তম)।
আগম শাস্ত্র কিছু আগম গ্রন্থের প্রামাণ্যতা অস্বীকার। আগম শাস্ত্রের সম্পূর্ণ সংকলনে বিশ্বাসী।

  উমাস্বাতির রচিত তত্ত্বার্থসূত্র (Tattvartha Sutra) হলো একটি ব্যতিক্রমী গ্রন্থ, যা দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর—উভয় সম্প্রদায়ই গ্রহণ করে এবং অধ্যয়ন করে ।   


৮. আধুনিক প্রেক্ষাপটে জৈন আন্দোলন ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ

জৈন ধর্ম মধ্যযুগে ভক্তিমূলক আন্দোলন এবং মুঘল আমলে নিপীড়নের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করলেও, গৃহস্থ অনুগামী (শ্রাবক) ও সাধুদের ভক্তির কারণে এটি টিকে থাকে । আধুনিক ভারতে জৈনরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মর্যাদা পেয়েছে এবং তাদের অনুগামীরা ভারত ছাড়াও কানাডা, ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে ।   

৮.১. সন্থারা বিতর্ক: কঠোর কৃচ্ছ্রসাধনের আইনি সংগ্রাম

আধুনিক সমাজে জৈন ধর্ম যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, তা হলো তাদের প্রাচীন ধর্মীয় আচার সল্লেখনা বা সন্থারা (Santhara) সম্পর্কিত আইনি বিতর্ক । সন্থারা হলো জীবনের শেষ পর্যায়ে মোক্ষ লাভের উদ্দেশ্যে ধীরে ধীরে খাদ্য ও পানীয় ত্যাগ করে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণের কঠোর ব্রত । জৈন সম্প্রদায় এটিকে আত্মহত্যা হিসেবে দেখে না, বরং আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধতা লাভের জন্য জাগতিক জীবন থেকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হওয়ার একটি পবিত্র আচার মনে করে ।   

এই কঠোর প্রথাটি আইনি বিতর্কের জন্ম দেয়। ২০১৫ সালে রাজস্থান হাইকোর্ট সন্থারাকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৬ এবং ৩০৯ ধারা অনুযায়ী আত্মহত্যার প্ররোচনা হিসেবে অবৈধ ঘোষণা করে। আদালত অভিমত দেয় যে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১-এর অধীনে প্রাপ্ত Right to Life (বেঁচে থাকার অধিকার) এর মধ্যে Right to Die (মৃত্যুর অধিকার) অন্তর্ভুক্ত নয় ।   

তবে, একই বছর সুপ্রিম কোর্ট জৈন সম্প্রদায়ের আবেদনের ভিত্তিতে রাজস্থান হাইকোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দেয়। সুপ্রিম কোর্ট সন্থারাকে একটি স্বতন্ত্র এবং ঐতিহাসিক ধর্মীয় ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ।   

এই আইনি সংগ্রামটি জৈন ধর্মের মূলনীতির সঙ্গে আধুনিক রাষ্ট্রের আইনি কাঠামোর সরাসরি সংঘাতকে তুলে ধরে। জৈন ধর্ম কঠোর কৃচ্ছ্রসাধনকে মুক্তির অপরিহার্য পথ মনে করে, আর সন্থারা তার চরম রূপ। অন্যদিকে, আধুনিক রাষ্ট্র অনুচ্ছেদ ২১-এর অধীনে নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায় । সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত এই ইঙ্গিত দেয় যে, সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাকৃত ও ধর্মীয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই ঐতিহাসিক আচারকে সাধারণ আত্মহত্যার শ্রেণিতে ফেলা যায় না, যা জৈনদের ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি রাষ্ট্রের সম্মানের পরিচায়ক।   

৮.২. অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে নৈতিক দ্বিধা

সাম্প্রতিককালে, বিশেষত একটি ৩ বছরের শিশুর সন্থারা গ্রহণের ঘটনায় বিতর্ক আরও জটিল রূপ ধারণ করে । এই ঘটনা শিশু অধিকার কর্মী এবং চিকিৎসকদের কাছ থেকে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়। প্রশ্ন ওঠে যে, অপ্রাপ্তবয়স্ক বা মানসিক দিক থেকে দুর্বল ব্যক্তিরা এই ধরনের জীবন-মরণের বিষয়ে অবহিত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম কি না ।   

এই বিতর্ক রাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করার দায়িত্ব এবং দুর্বল নাগরিকদের জীবন রক্ষা করার দায়িত্বের মধ্যেকার সীমারেখা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে । এই ধরনের ঘটনা এড়াতে এবং প্রথাটির অপব্যবহার রোধ করতে সন্থারার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশিকা প্রণয়ন এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে, যাতে সিদ্ধান্তটি প্রকৃত অর্থেই স্বেচ্ছামূলক এবং অবহিত হয় ।   


৯. উপসংহার: জৈন ধর্মের চিরন্তন বার্তা

জৈন ধর্ম, যা খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে বৈদিক ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রতিবাদী ধারা হিসেবে শ্রমণ ঐতিহ্য থেকে বিকশিত হয়েছিল, তার মূল ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল আদি তীর্থঙ্কর ঋষভনাথের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক প্রবর্তনার মাধ্যমে । মহাবীর এই চিরন্তন শিক্ষাকে পুনরুজ্জীবিত করেন এবং পঞ্চ-মহাব্রত পালনের কঠোর নৈতিক পথ প্রদর্শন করেন।   

জৈন দর্শনের সবচেয়ে বড় অবদান হলো এর জ্ঞানতাত্ত্বিক নমনীয়তা এবং কঠোর নৈতিকতা। কর্মকে সূক্ষ্ম বস্তু (কার্মিক পুদ্গল) হিসেবে দেখার বস্তুবাদী ধারণাটি এই ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে কঠোর কৃচ্ছ্রসাধনের প্রয়োজনীয়তা তৈরি করে । আবার, অনেকান্তবাদ ও স্যাদ্বাদের মাধ্যমে জৈনরা দার্শনিক জগতে এক ধরণের বৌদ্ধিক অহিংসা প্রতিষ্ঠা করেছে, যা বহুত্ববাদকে স্বীকৃতি দেয় এবং সমাজে সহনশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে ।   

দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন এবং আগম শাস্ত্রের আংশিক ক্ষতি সত্ত্বেও, উমাস্বাতির তত্ত্বার্থসূত্র এর মতো সর্বজনীন শাস্ত্র এই ঐতিহ্যের দার্শনিক ঐক্যের প্রতীক হিসেবে রয়ে গেছে । সন্থারার মতো প্রথা নিয়ে আধুনিক আইনি সংগ্রামগুলি প্রমাণ করে যে জৈন ধর্ম আজও তার প্রাচীনতম এবং কঠিনতম আধ্যাত্মিক নীতিগুলিকে আধুনিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে বজায় রাখার জন্য সংগ্রাম করে চলেছে। জৈন ধর্মের মূল বার্তা হলো—ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা, কঠোর নৈতিক আচরণ (ত্রিরত্ন) এবং সমস্ত জীবনের প্রতি ঐকান্তিক অহিংসা—যা কেবল মোক্ষের পথ নয়, বরং একটি দায়িত্বশীল ও মানবিক সমাজ গঠনের ভিত্তি।   


১০. তথ্যসূত্র (References)

  •  পরবর্তী বৈদিক যুগের শেষদিক থেকে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যেতে থাকে… উপনিষদ যে সরল ধর্ম চিন্তার কথা বর্ণনা করেছে তা রূপলাভ করার জন্যই যে জৈন ও. বৌদ্ধ ধর্মের উদ্ভব ঘটে।   
  •  Sramana was an ancient Indian religious movement with origins in the Vedic religion. However, it took a divergent path, rejecting Vedic Hindu ritualism and the authority of the Brahmins.   
  •  Jainism does not have a single founder; rather, the truth is brought to the world by a teacher who shows the way, or a Tirthankara… Mahavira is the 24th and last Tirthankara.   
  •  মহাভিরা… জৈনধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। তিনি অনন্তভাদ (বহুবিধ সত্যিকারের বাস্তবতা) এর নীতিগুলি শিখেছিলেন… অহিংসা, সততা, অস্তিত্ব, ব্রহ্মচার্য এবং আপরিগ্রহ।   
  •  প্রথম তীর্থংকরের নাম ঋষভনাথ। বর্তমানে তিনি “আদিনাথ ভগবান” নামেও পরিচিত। জৈনরা বিশ্বাস করেন, ঋষভনাথ জন্মগ্রহণ করেছিলেন বহু লক্ষ বছর আগে… এই ধর্ম দু’টি প্রধান প্রাচীন সম্প্রদায়ে বিভক্ত: দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর।   
  •  Rishabhanatha traveled for a whole year without eating… He achieved Moksha (freedom from rebirth) on Mount Asthapada. The book Adi Purana tells the story of his life and teachings… He taught Brahmi the Brahmi script…   
  •  Rishabhanatha is known by many names including Adinatha… Rishabhanatha was born to Nabhi and Marudevi, the king and queen of Ayodhya… He is said to have established the three-fold varna system.   
  •  জৈন দর্শনে মোক্ষলাভের জন্য চিত্তশুদ্ধির নানা পদ্ধতির উল্লেখ করা হয়েছে যার মধ্যে ত্রিরত্ন উল্লেখযোগ্য। সম্যক দর্শন জৈন দর্শনের ভিত্তিস্বরূপ।   
  •  অহিংসা মানে হিংসার পরিত্যাগ… জৈন সন্ন্যাসীরা এই ব্রতের পালন অধিক নিষ্ঠা ও তৎপরতার সাথে করে থাকেন… অহিংসা কেবল হিংসা ত্যাগ করাকে বুঝায় না, পাশাপাশি জীবের প্রতি প্রেম করাকেও বুঝায়।   
  •  The entire universe is filled with such karmic matter… Karma subdues the natural qualities of the soul.   
  •  The Jain doctrine also holds that it is possible for us to both modify our karma, and to obtain release from it, through the austerities and purity of conduct… Karma is the root of birth and death.   
  •  Women must gain karmic merit, to be reborn as man, and only then can they achieve spiritual liberation in the Digambara sect… The Śvetāmbaras strictly disagree…   
  •  The Śvetāmbaras state the 19th Tirthankara Māllīnātha was female. Digambaras reject this.   
  •  খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে বৈদিক ব্রাহ্মণ্য ধর্মের নানা দুর্নীতির বিরুদ্ধে নব্যধর্ম আন্দোলন বা প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন গড়ে উঠেছে… মহাবীর পঞ্চমহাব্রত প্রচার করেন।   
  •  ব্রাহ্মণ্যবাদের কঠোর আচার, যজ্ঞ ও জাতিভেদপ্রথা থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাই ছিল এ ধর্ম আন্দোলনের মূল প্রেরণা।   
  •  Jainism is an ancient Indian religion belonging to the Śramaṇa tradition… Jains trace their history through a lineage of twenty-four tirthankaras…   
  •  The period from the eighth to the twelfth century A.D. is regarded as the golden period in the history of Jainism… retained the support of the middle classes, like merchants and bankers.   
  •  Umāsvāti… His Tattvartha Sutra has been a key and the oldest surviving text in Jainism, was accepted and widely studied in all four Jaina traditions.   
  •  The Tattvārthsūtra is regarded as the most authoritative book on Jainism, and the only text authoritative in both the Svetambara and Digambara sects.   
  •  বস্ততঃ পক্ষে অনেকাস্তবাদী জৈনদার্শনিকগণের মূলভিত্তি হইতেছে ‘স্যাদ্বাদ’ ও ‘নয়বাদ’।   
  •  মহাবীরের সময়ে জৈনধর্ম ছিলো ব্রত উপবাস ও তপস্যার পথ। তখনো দর্শনের ছোঁয়া তাতে লাগে নি… জৈনগণ তাঁদের অনেকান্তবাদী স্যাদবাদ দর্শন প্রবর্তন করেন।   
  •  Anekantavada asserts reality is complex and multifaceted… Syadvada provides a logical framework for expressing these viewpoints… Consists of seven propositions (saptabhangi).   
  •  Anekantavada: Reality as Multifaceted… Syadvada: Conditional Predication… This approach aligns with Jainism’s commitment to ahimsa, extending non-violence to intellectual and spiritual realms.   
  •  জৈনদের ধর্মগ্রন্থের নাম আগম। জৈন ধর্মগ্রন্থ ও সাহিত্যে প্রাকৃত ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।   
  •  The first council was held at Pataliputra… The third council was held at Vallabhi under auspices of Devarddhigani Kshamashramana when the texts were written down.   
  •  The first Jain Council was held at Pataliputra… The second Jain council was held simultaneously at Mathura and Vallabhi… Svetambara sect was led by Sthulabhadra and the Digambara sect was led by Bhadrabadu.   
  •  খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের কারণ… তাদের ভাবধারা এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ তাদেরকে ভারতের বিভিন্ন রাষ্ট্রের শাসকদের সম্ভাব্য মিত্র করে তুলেছিল।   
  •  Santhara is regarded as a vow undertaken when life has served its purpose… The debate around Santhara isn’t new. In 2015, the Rajasthan High Court declared it illegal, equating it to suicide.   
  •  Supreme Court stayed the Rajasthan HC’s verdict, recognising Santhara as a distinct religious tradition, acknowledging petitions from the Jain community.   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *