হিন্দু ধর্ম: উৎপত্তি, বেদ, রামায়ণ, পূজা, বিতর্ক

হিন্দুধর্মের উৎপত্তি, ইতিহাস ও বিতর্ক: বেদ থেকে মূর্তিপূজা এবং সামাজিক বিশ্লেষণ

প্রতিবেদক: জে এইচ সুমন, প্রকাশনা: জনতা নিউজ

ভূমিকা: সনাতন ধর্ম থেকে হিন্দুধর্মের পথে

হিন্দুধর্ম, যা এর অনুসারীদের কাছে মূলত ‘সনাতন ধর্ম’ নামে পরিচিত, কোনো একক প্রবর্তক বা নির্দিষ্ট সূচনা তারিখের উপর নির্ভরশীল নয়। ‘সনাতন’ শব্দের অর্থ শাশ্বত বা চিরন্তন; অর্থাৎ যা সময়ের সঙ্গে স্থিতিশীল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এই ধর্মটি যুগ যুগ ধরে মুনি-ঋষি এবং মহামনীষীদের জীবন, জগৎ ও স্রষ্টা সম্পর্কিত চিন্তা-ভাবনার সমন্বিত রূপ 1। এই গভীর দার্শনিক ভিত্তিই হিন্দুধর্মের স্থিতিশীলতা নির্ধারণ করে।

তবে এর পরিচিতি নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বৈততা লক্ষ্য করা যায়। ধর্মটির আধ্যাত্মিক মূল হলো ‘সনাতন’, যা এর দার্শনিক গভীরতা এবং শাশ্বত প্রকৃতিকে বোঝায়। অন্যদিকে, ‘হিন্দু’ শব্দটি মূলত ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটে অপেক্ষাকৃত আধুনিককালে প্রচলিত হয়। এই দ্বৈততা নির্দেশ করে যে হিন্দুধর্ম একটি একক, অপরিবর্তনীয় বিশ্বাস নয়; বরং এটি একটি ক্রমাগত বিবর্তনশীল কাঠামো যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার রূপ পরিবর্তন করেছে। এর দার্শনিক মূল ভিত্তি হলো স্বয়ম্ভূ ঈশ্বরে বিশ্বাস এবং বিশ্বজগতের সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের ধারণা। পাশাপাশি, এই ধর্মের মূল ভিত্তি হলো জন্মান্তরবাদ, যেখানে জীব জন্ম, মৃত্যু ও পুনর্জন্মের প্রক্রিয়াধীন থাকে এবং পাপ ক্ষয় দ্বারা মোক্ষ লাভই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

ঐতিহাসিক ও কালানুক্রমিক বিশ্লেষণ অনুসারে, হিন্দুধর্মের বিবর্তনকে প্রধানত কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়: আদি বৈদিক যুগ (ঋগ্বেদীয় ধর্ম), পরবর্তী বৈদিক যুগ (ব্রাহ্মণ্যবাদ ও উপনিষদ), পৌরাণিক যুগ (স্মৃতিশাস্ত্র ও অবতার উপাসনা), এবং আধুনিক হিন্দু পুনর্জাগরণ (১৮৫০ খ্রিস্টাব্দের পরে)। বৈদিক যুগের সময়কাল সাধারণত খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ থেকে ৫০০ অব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

হিন্দু ধর্মের ঐতিহাসিক বিবর্তন: বৈদিক আচার থেকে দার্শনিক জ্ঞান

হিন্দু ধর্মের ইতিহাস বৈদিক সাহিত্য রচনার প্রায় এক হাজার বছরেরও বেশি সময় জুড়ে বিস্তৃত, যেখানে ধর্মীয় অনুশীলন এবং দার্শনিক ধারণাগুলি ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়েছে।

আদি বৈদিক যুগ (খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ – ১১০০ অব্দ)

এই প্রাচীন যুগে ধর্মচর্যা ছিল মূলত যাগযজ্ঞমূলক। এই সময়ে ভারতীয় আর্যরা পাঞ্জাব অঞ্চলে পশুপালনভিত্তিক জীবনধারা অনুসরণ করতেন। উপাসনা প্রধানত প্রাকৃতিক দেবদেবী, যেমন অগ্নি, ইন্দ্র, বরুণ, ঊষা প্রমুখের উদ্দেশ্যে নিবেদিত ছিল, যাঁদেরকে প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তির আধার হিসেবে দেখা হতো। এই সময়কালেই ঋগ্বেদীয় ধর্ম এবং ঋগ্বেদের মন্ত্র সংহিতাগুলি রচিত হয়। এই ধর্মীয় চর্চা ছিল মূলত পিতৃতান্ত্রিক সমাজের কেন্দ্রবিন্দু।

পরবর্তী বৈদিক ও ব্রাহ্মণ্যবাদের বিকাশ (খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ – ৫০০ অব্দ)

পরবর্তী বৈদিক যুগে আর্য সংস্কৃতি পূর্ব দিকে গঙ্গা সমভূমির দিকে বিস্তৃত হয়। লৌহ সরঞ্জাম ব্যবহারের মাধ্যমে বন পরিষ্কার করে কৃষিভিত্তিক জীবনধারা গ্রহণ করা হয়। এই সময়ে ব্রাহ্মণ্যবাদী আদর্শের ভিত্তি স্থাপিত হয়, যা কুরু রাজ্যে বিশেষ প্রভাবশালী ছিল। এই আদর্শে যজ্ঞকে সর্বাপেক্ষা পবিত্র কর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বেদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তর এই সময়ে রচিত হয়: ব্রাহ্মণ সাহিত্য, যা যজ্ঞের বিস্তারিত অনুষ্ঠানাদি বর্ণনা করে; এবং আরণ্যক, যা অরণ্যে জীবনযাপন ও আধ্যাত্মিক জীবন গঠনের আলোচনা করে।

উপনিষদীয় বিপ্লব: জ্ঞানমার্গের প্রাধান্য

বেদের চতুর্থ পর্যায় হলো উপনিষদ, যা ‘বেদান্ত’ নামেও পরিচিত 4। উপনিষদ বিশ্বের রহস্য উন্মোচনে মানুষের আকুতি প্রকাশ করে এবং এটি হিন্দুধর্মের তাত্ত্বিক ভিত্তি নিয়ে আলোচনা করে 1। উপনিষদীয় দর্শন মূলত আচার-সর্বস্ব ব্রাহ্মণ্যবাদী ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করে জ্ঞানকে কেন্দ্রবিন্দুতে আনে।

উপনিষদের মূল উপজীব্য বিষয় হলো আত্মা (Atman) এবং ব্রহ্ম (Brahman) 4। আত্মা হলো ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ সত্তা, যা চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয়, আর ব্রহ্ম হলো চূড়ান্ত বাস্তবতা, যা সকল সৃষ্টির উৎস। উপনিষদের মূল শিক্ষা হলো “তত্ত্বমসি” (তুমিই যে সেই আত্মা), যা অদ্বৈতবাদের মূল ভিত্তি। এই সময়েই কর্মের ধারণা বা ‘কর্ম তত্ত্ব’ (Karma doctrine) প্রতিষ্ঠিত হয়।

আদি বৈদিক ধর্ম যাগযজ্ঞ এবং পুরোহিতদের উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু উপনিষদীয় চিন্তাধারা ধর্মকে একটি নির্দিষ্ট সামাজিক শ্রেণীর (পুরোহিত) নিয়ন্ত্রণ থেকে সরিয়ে এনে অভ্যন্তরীণ দার্শনিক অনুসন্ধানের দিকে চালিত করে। এই পরিবর্তনকে ধর্মীয় চিন্তার একটি ‘অভ্যন্তরীণ বিপ্লব’ বলা যেতে পারে, যা পরবর্তীকালে বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের মতো শ্রমণ আন্দোলনের দার্শনিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় হিন্দুধর্মকে আরও দৃঢ় দার্শনিক ভিত্তি এনে দেয়। এটিই ব্রাহ্মণ্যবাদের পতনের সময়েও ধর্মের দার্শনিক মূল কাঠামোটি রক্ষা করে।

পৌরাণিক যুগে রূপান্তর: ইকোকেন্দ্রিকতা থেকে নৃতাত্ত্বিক উপাসনা

বৈদিক যুগে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে ‘ব্রহ্মণস্পতি’ (সৃষ্টির কারণ) ধারণা থেকে পরবর্তীতে ‘ব্রহ্মা’ (সৃষ্টিকর্তা) ধারণার বিকাশ ঘটে। এই রূপান্তরের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় চিন্তাধারা ইকোকেন্দ্রিক (প্রকৃতি কেন্দ্রিক) বৈদিক আদর্শ থেকে নৃতাত্ত্বিক (মানুষ কেন্দ্রিক) পৌরাণিক দর্শনে পরিবর্তিত হয়।

পৌরাণিক যুগের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো অবতারবাদের জন্ম—অর্থাৎ, ঈশ্বরের পৃথিবীতে মাঝে মাঝে প্রকাশিত হওয়া। নিরাকার ব্রহ্মের ধারণাকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করার জন্য এই অবতার ধারণাটি অত্যন্ত কার্যকর ছিল 5। অবতারের মাধ্যমে ঈশ্বরকে মানবিক চরিত্রে উপস্থাপন করা হয় (যেমন রাম, কৃষ্ণ), যা সাধারণ মানুষকে ব্যক্তিগত ভক্তি (ভক্তিযোগ) এবং সম্পর্কের মাধ্যমে ঈশ্বরকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে, যা পরবর্তীতে মূর্তিপূজার মূল ভিত্তি তৈরি করে।

বেদের অপরিহার্য গুরুত্ব ও চতুর্বেদের বিশ্লেষণ

বেদ হিন্দুধর্মের মূল উৎস এবং সর্বোচ্চ প্রামাণ্য গ্রন্থ, যা হিন্দুদের বিশ্বাসে ঈশ্বরের বাণী বা ‘শ্রুতি’ হিসেবে গণ্য হয় 1। বেদের পরেই স্থান পায় স্মৃতিশাস্ত্র (যেমন মনু সংহিতা), যা ধর্মীয় আচার-আচরণ সংক্রান্ত ব্যাখ্যা হলেও বেদের ভিত্তিতে এর সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হতে পারে 1। বেদ শুধু মন্ত্রের সংকলন নয়, এটি একটি গভীর ধর্মদর্শন।

চতুর্বেদের মূল বিষয়বস্তু

বেদ চারটি: ঋক, যজু, সাম এবং অথর্ব 12। এদের বিষয়বস্তু ও উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও, সবগুলিই হিন্দুধর্মের ভিত্তিপ্রস্তর রচনা করেছে।

বেদের নাম মূল বৈশিষ্ট্য উপাসনার ধরন গুরুত্বপূর্ণ অংশ/ প্রভাব
ঋগ্বেদ প্রাচীনতম স্তোত্র ও মন্ত্র সংকলন বহু দেবদেবী (অগ্নি, ইন্দ্র, বরুণ) বন্দনা 1 প্রাকৃতিক শক্তি পূজা, মনোথিজমের প্রাথমিক লক্ষণ
যজুর্বেদ যজ্ঞ ও আচারের নির্দেশিকা (Book of Ritual) যজ্ঞে ব্যবহৃত গদ্য প্রার্থনা ও বলিদান পদ্ধতি পুরোহিতদের জন্য নির্দেশিকা, আনুষ্ঠানিক ধর্মের ভিত্তি
সামবেদ গানের বই (Book of Song/Melodies) ঋগ্বেদের স্তোত্রের সুরেলা উপস্থাপনা ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও নৃত্যের উৎস
অথর্ববেদ জাদু ও তন্ত্রের বই (Book of Spell/Charms) রোগ নিরাময়, যাদুবিদ্যা, গার্হস্থ্য জীবনের আচার ইতিহাস ও সমাজতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ

বেদের কাঠামোগত বিবর্তন

বেদের চারটি প্রধান স্তর রয়েছে—সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, এবং উপনিষদ—যা বৈদিক যুগের বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠেছে।

  1. সংহিতা: এটি দেবতাদের উদ্দেশে নিবেদিত মন্ত্র বা শ্লোকের সংকলন।
  2. ব্রাহ্মণ: এতে যজ্ঞসংক্রান্ত অনুষ্ঠানাদির বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে, যা আচার-সর্বস্বতা বা কর্মকাণ্ডকে জোর দেয়।
  3. আরণ্যক: এটি অরণ্যে জীবনযাপন এবং আধ্যাত্মিক জীবন গঠনের আলোচনা করে। আরণ্যকের মাধ্যমে বৈষয়িক পরিতৃপ্তি থেকে সূক্ষ্ম (আধ্যাত্মিক) চিন্তাধারার দিকে পরিবর্তনের সূচনা হয়।
  4. উপনিষদ (বেদান্ত): এটি জ্ঞানের চূড়ান্ত লক্ষ্য, বিশ্বের রহস্য এবং আত্মা-ব্রহ্মের মিলনের মাধ্যমে মোক্ষ লাভের পথ দেখায়।

এই কাঠামোগত বিবর্তন ইঙ্গিত দেয় যে হিন্দুধর্মের আধ্যাত্মিক পথটি কঠোরভাবে স্থির ছিল না। বরং এটি মানুষের জ্ঞান এবং চেতনার স্তর বৃদ্ধির সাথে সাথে ধর্মের রূপকে পরিবর্তিত করেছে। এই ক্রমিকতা প্রমাণ করে যে এই ধর্মীয় অভিব্যক্তি সমাজের পরিবর্তিত আধ্যাত্মিক চাহিদা অনুযায়ী বিবর্তিত হয়েছে, যা এটিকে একটি গতিশীল ধর্মদর্শনে পরিণত করেছে।

রামায়ণ: আদর্শের মহাকাব্য এবং নৈতিক বিতর্ক

রামায়ণ মহর্ষি বাল্মীকি রচিত, যা হিন্দুধর্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং প্রাচীন মহাকাব্য, যা ‘আদিকাব্য’ নামে পরিচিত। এটি প্রায় ২৪,০০০ শ্লোক, ৫০০ সর্গ এবং সাতটি কাণ্ডে বিভক্ত। এটি কেবল মহাকাব্য নয়, এটি ইতিহাস, পুরাণ, এবং ধর্মশাস্ত্রের মর্যাদাও লাভ করেছে। রামায়ণের মূল উপজীব্য হলো রামের জীবন কাহিনী, যার মাধ্যমে ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ এই চারটি মূল মানবিক লক্ষ্যের রত্নময় আধার হিসেবে এটিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

রামায়ণ মানবিক সম্পর্কের আদর্শ কর্তব্যগুলি চিত্রিত করে, যেখানে আদর্শ রাজা (রাম), আদর্শ স্ত্রী (সীতা), আদর্শ ভাই (ভরত, লক্ষ্মণ) এবং আদর্শ সেবকের (হনুমান) চরিত্রগুলি বর্ণিত হয়েছে। এই মহাকাব্যটি ভারতীয় সংস্কৃতি চেতনা এবং জীবন্ত প্রেরণা হিসেবে সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম, সাহিত্য ও শিল্পকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। ভারতবর্ষের বহু মানুষ আজও রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে রাম, সীতা ও হনুমানের নাম জপ করেন। পরবর্তীকালে সংস্কৃত সাহিত্য (যেমন কালিদাসের রঘুবংশম) এবং প্রাদেশিক সাহিত্য (যেমন কৃত্তিবাসের রামায়ণ) এর মূল উপাদান রামায়ণ থেকে সংগৃহীত হয়েছে।

রামায়ণ উত্তরকাণ্ড বিতর্ক

বাল্মীকি রচিত রামায়ণের প্রথম ছয় কাণ্ড (বালকাণ্ড থেকে যুদ্ধকাণ্ড) সাধারণভাবে প্রামাণিক হিসেবে গৃহীত হলেও, সপ্তম কাণ্ড—উত্তরকাণ্ড (Uttara Kanda) এর ঐতিহাসিক ও দার্শনিক প্রামাণিকতা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক রয়েছে।

উত্তরকাণ্ডে দুটি প্রধান ঘটনা বর্ণিত হয়েছে যা নৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে: সীতা পরিত্যাগ (Sita-parityaga) এবং শম্বুক বধ (Sambuka-vadha)।

  1. সীতা পরিত্যাগ: উত্তরকাণ্ড অনুসারে, রাম রাজা হওয়ার পর শুধুমাত্র জননিন্দার কারণে গর্ভবতী সীতাকে ত্যাগ করেছিলেন। এই কাজটি ব্যক্তিগত সম্পর্কের আদর্শের ক্ষেত্রে প্রশ্নচিহ্ন সৃষ্টি করে।
  2. শম্বুক বধ: এই অংশে দেখানো হয়েছে যে এক শূদ্র তপস্যায় লিপ্ত থাকার কারণে ব্রাহ্মণপুত্রের অকালমৃত্যু ঘটে। রাম তখন শাস্ত্রীয় বিধান লঙ্ঘনের অপরাধে সেই শূদ্র শম্বুককে হত্যা করেন। এই ঘটনা জন্মগত জাতিভেদ প্রথাকে এবং শূদ্রদের ধর্মীয় অধিকার হরণকে শাস্ত্রীয় অনুমোদন দেওয়ার চেষ্টা করে। যদিও ঐতিহ্যবাদী পন্থীরা পদ্মপুরাণকে উদ্ধৃত করে রামের এই কাজকে ধর্মসম্মত বলে মনে করেন, কারণ তিনি ‘দুরাচার শূদ্রকে হত্যা করিয়া ব্রাহ্মণপুত্রের পুনর্জীবন সাধন’ করেছেন।

সমালোচকরা মনে করেন, উত্তরকাণ্ডকে মূল রামায়ণের অংশ হিসেবে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল যে তা বাল্মীকির রামায়ণে উপস্থাপিত মানবতাবাদী মূল্যবোধকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে 15। এই ধরনের সংযোজনগুলি ইঙ্গিত দেয় যে যখন সমাজে ব্রাহ্মণ্যবাদী আইনি বিধি (স্মৃতিশাস্ত্রের কঠোরতা) শক্তিশালী হচ্ছিল, তখন মহাকাব্যগুলিকে নতুন সামাজিক ও আইনি বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। শম্বুক বধের ঘটনা প্রমাণ করে যে কীভাবে তৎকালীন প্রভাবশালী শক্তিগুলি সমাজের ধর্মীয় অধিকারগুলিকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল এবং এটিকে আদর্শ রাজার কাজের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।

তবে রামায়ণের নৈতিকতা সময়ের সাথে সাথে স্থানীয় সংস্কৃতিতে পরিবর্তিত হয়েছে। কেরালায় প্রচলিত আড়িয়া রামায়ণের মতো লোককথায়, রামকে তার স্ত্রীকে ত্যাগের জন্য বিচারালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, যেখানে তিনি তার ভুল স্বীকার করে সীতাকে পুনরায় গ্রহণ করেন 15। এই ধরনের সংস্করণগুলি নির্দেশ করে যে আধুনিক সমাজ যখন মানবিক অধিকার ও সমতার বিষয়ে সচেতন, তখন মানুষ শাস্ত্রীয় চরিত্রগুলির ত্রুটিগুলি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে এবং হিন্দু ধর্মের মধ্যে চলমান নৈতিক পুনর্গঠনকে বাঁচিয়ে রাখছে।

মূর্তিপূজা: প্রতীকের উপাসনা ও তার ইতিহাস

হিন্দু ধর্মে মূর্তিপূজা মূলত প্রতীকের মাধ্যমে আরাধনা করার একটি পদ্ধতি 19। এর দার্শনিক ভিত্তি হলো নিরাকার ব্রহ্মকে সাকার রূপে কল্পনা করার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের পক্ষে উপাসনাকে সহজ ও বোধগম্য করে তোলা 5। ভারতীয় আর্যরা উপলব্ধি করেছিলেন যে অসীম অনন্ত ঈশ্বরকে নিরাকার রূপে ধারণা করা মানুষের সীমাবদ্ধ শক্তির পক্ষে কঠিন।

নিরুক্তকার আচার্য যাস্কের মতে, দেবতারা সাকার (পুরুষবিধ) এবং নিরাকার (অপুরুষবিধ) উভয়ই হতে পারেন (“অপি বোভয়-বিধাঃ স্যুঃ”)। মূর্তিপূজা মূলত ঈশ্বরের প্রতীক উপাসনা, যেখানে মৃন্ময়ী, দারুময়ী বা প্রস্তরময়ী প্রতিমার প্রতীকে ঈশ্বরকে উপলব্ধি করার সাধনা সুপ্রাচীন কাল থেকেই প্রচলিত।

বৈদিক ধর্ম এবং মূর্তির স্থান

বৈদিক ধর্মচর্যা ছিল মূলত যাগযজ্ঞমূলক 5। প্রাচীন বৈদিক সাহিত্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে দেবতাদের বিশেষ কোনো শরীর ছিল না বলে মনে করা হতো। মীমাংসাদর্শন প্রণেতা জৈমিনীর মতে দেবতা মন্ত্রময়ী; মন্ত্রই দেবতার শরীর। একই সঙ্গে বহু যজ্ঞে দেবতাদের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে তারা শরীরী জীব ছিলেন না 5। ফলে, আদি বৈদিক যুগে সরাসরি মূর্তিপূজার প্রচলন দেখা যায় না।

মূর্তিপূজার প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক ক্রমবিকাশ

মূর্তিপূজার ব্যাপক প্রচলন বৈদিক যুগের পরে ঘটে। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ মতে, হিন্দুধর্মে এবং জৈনধর্মে যক্ষ মূর্তি ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বের প্রস্তর মূর্তি খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকের দিকে প্রথম তৈরি হয়েছিল।

তবে গবেষকদের অনেকে মনে করেন, ভারতে নিয়মতান্ত্রিক মূর্তিপূজা (Idol Worship) প্রথম ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে মহাযান বৌদ্ধধর্মের উত্থানের সাথে। মহাযান বৌদ্ধধর্মে বুদ্ধের নৃতাত্ত্বিক (anthropomorphic) চিত্র এবং মূর্তি পূজা শুরু হয়, যা গান্ধার ও মথুরা শিল্পকলার মাধ্যমে প্রসারিত হয়। এই ধারণাটি হিন্দুধর্মকেও প্রভাবিত করেছিল।

মূর্তিপূজা কেবল দার্শনিক প্রয়োজনীয়তা (নিরাকার উপলব্ধি কঠিন) থেকে আসেনি, বরং এটি সামাজিক প্রতিযোগিতা ও প্রসারের একটি পদ্ধতি ছিল। বৌদ্ধধর্ম যখন বুদ্ধের মানবাকৃতির মূর্তি দিয়ে সাধারণ মানুষকে আকর্ষণ করছিল, তখন হিন্দুধর্মকে সেই জনপ্রিয় ভিজ্যুয়াল পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয়েছিল।

গুপ্ত যুগের প্রমিতিকরণ: হিন্দুধর্মে মূর্তিপূজা খ্রিস্টাব্দ ৪থ থেকে ৬ষ্ঠ শতকে গুপ্ত যুগে ব্যাপকভাবে প্রমিত হয়। এই সময়েই প্রথম উদ্দেশ্যমূলক হিন্দু মন্দিরগুলি নির্মিত হয়। এই মন্দিরগুলির গর্ভগৃহে বিষ্ণু, শিব বা অন্যান্য দেব-দেবীর মূর্তি স্থাপন করা শুরু হয়, যেমন উদয়গিরির গুহাগুলিতে বরাহ রূপে বিষ্ণুর সুবিখ্যাত রিলিফ।

আগম শাস্ত্রের ভূমিকা

পৌরাণিক যুগে আগম শাস্ত্র (Agama Shastras) এবং শিল্পশাস্ত্র (Shilpa Shastras) বিকশিত হয়। এই শাস্ত্রগুলি মন্দির নির্মাণের স্থান (Sthala), তীর্থ, এবং বিশেষত মূর্তির (Murti) আকার, অনুপাত, উপাদান এবং প্রতিষ্ঠার নিয়মাবলী বিশদভাবে বর্ণনা করে। এই শাস্ত্রের বিধান অনুসারে আধ্যাত্মিক কর্তৃত্ব দ্বারা একটি মূর্তিকে আধ্যাত্মিক শক্তি দিয়ে প্রাণবন্ত করা হয়, যার ফলে সেই মূর্তিটি উপাসনার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। এই প্রমিতিকরণ ধর্মীয় বাজারের কৌশল হিসেবে কাজ করেছিল, যেখানে জটিল আচার-নির্ভর ধর্মটি ভক্তিনির্ভর এবং দৃশ্যমান ধর্মে রূপান্তরিত হয়।

হিন্দু ধর্মের গভীর সামাজিক বিতর্কসমূহ: বর্ণাশ্রম ও জাতিভেদ প্রথা

হিন্দুধর্মের অভ্যন্তরে সবচেয়ে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক বিতর্কগুলির মধ্যে অন্যতম হলো জাতিভেদ প্রথা বা বর্ণাশ্রম ব্যবস্থা। সনাতন ধর্মগ্রন্থে ব্রাহ্মণ (মুখ), ক্ষত্রিয় (বাহু), বৈশ্য (বক্ষ/উরু), ও শূদ্র (পা) —এই চারটি বর্ণকে ব্রহ্মার বিভিন্ন অঙ্গ থেকে সৃষ্ট বলে বিশ্বাস করা হয়, যা তাদের সামাজিক স্তরের জন্মগত শ্রেষ্ঠত্বকে প্রতিষ্ঠা করে।

বর্ণাশ্রম প্রথার কঠোরতা

শাস্ত্রীয় প্রয়োগে এই বিভেদ ছিল চরম। ব্রাহ্মণদের জন্য বেদ পাঠ, পৌরোহিত্য এবং শিক্ষাদানের অধিকার সংরক্ষিত ছিল। শূদ্রদের জন্য নির্ধারিত ছিল উপরোক্ত তিন বর্ণের সেবা করা। তাদের উপাসনা এবং মন্দিরে প্রবেশের অধিকার সীমিত ছিল। শাস্ত্রে শূদ্রদের প্রতি কঠোর বৈষম্যের বিধানও দেখা যায়; যেমন ব্রাহ্মণকে উপদেশ দিলে জিহ্বা কেটে ফেলা বা ব্রাহ্মণের আসনে বসলে উত্তপ্ত লৌহশলাকা দ্বারা শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ।

এই বিভাজন শুধুমাত্র ধর্মীয় ছিল না; এটি একটি ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ফলাফলও ছিল। একটি তত্ত্ব অনুসারে, আর্য জাতির বিজয়ের প্রেক্ষাপটে এই বর্ণবিভক্তি তৈরি হয়েছিল, যেখানে ক্ষমতা এবং সম্পদ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিজয়ী জনগোষ্ঠী (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়) বিজিত বা পক্ষত্যাগকারী দ্রাবিড়দের উপর (বৈশ্য, শূদ্র) স্তর বিন্যাস চাপিয়ে দিয়েছিল 26। ধর্মীয় শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যাগুলি পরবর্তীতে এই সামাজিক ও রাজনৈতিক শ্রেণিবিন্যাসকে বৈধতা দিয়েছে।

দলিত জাতি, যারা শূদ্রদের চেয়েও নিম্ন, তারা আরও ভয়াবহ বৈষম্যের শিকার হতো। তারা সাধারণ জনগণের পথ বা পণ্য ব্যবহার করতে পারত না এবং মন্দিরে প্রবেশ বা কুয়া ব্যবহারের অধিকার তাদের ছিল না।

ভক্তি আন্দোলনের প্রতিবাদ

বর্ণাশ্রম প্রথার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ প্রতিবাদ আসে ভক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে। ভক্তি আন্দোলন আনুষ্ঠানিক আচার-সর্বস্বতার চেয়ে ব্যক্তিগত ভক্তির (Personal Devotion) উপর জোর দেয়, যা পুরোহিতদের মধ্যস্থতার প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করে। ভক্তি সাধকরা স্থানীয় ভাষা ব্যবহার করায় আধ্যাত্মিক শিক্ষা নিম্নবর্ণের মানুষের কাছেও সহজলভ্য হয় এবং তারা সামাজিক সমতা প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

ভক্তি আন্দোলন নিম্নবর্ণের মানুষের জন্য ধর্মতাত্ত্বিক সাম্য নিশ্চিত করলেও, এই আন্দোলনের একটি সীমাবদ্ধতা ছিল। দক্ষিণ ভারতে এই আন্দোলন দীর্ঘমেয়াদে বর্ণাশ্রম প্রথার সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তিগুলিকে পুরোপুরি চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি। ফলে ভক্তিধারা পরবর্তীকালে ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণ্যবাদের সাথে মিশে যায়।

আধুনিক সমাজ সংস্কার: মন্দির প্রবেশ আন্দোলন

আধুনিক যুগে জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে আইনি ও সামাজিক স্তরে লড়াই শুরু হয় মন্দির প্রবেশ আন্দোলনের মাধ্যমে। ১৯২৭ সালে ভীমরাও আম্বেদকর এই আন্দোলন শুরু করেন, যার লক্ষ্য ছিল নিম্নবর্ণের মানুষকে মন্দিরে প্রবেশ এবং কুয়ো ব্যবহারের সমান অধিকার দেওয়া।

এই আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য আসে ১৯৩৬ সালে, যখন ত্রাভাঙ্কোর রাজ্যের মহারাজ চিতিরা তিরুনাল বলরাম বর্মা ঐতিহাসিক টেম্পল এন্ট্রি প্রোক্লামেশন জারি করেন। এই ঘোষণা পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে মন্দিরে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে। ঐতিহাসিকেরা মনে করেন, এই পদক্ষেপ গ্রহণের পেছনে একটি বড় কারণ ছিল হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখা এবং নিম্নবর্ণের মানুষের খ্রিষ্টান ধর্মে ব্যাপক ধর্মান্তর রোধ করা।

ভক্তি আন্দোলন যেখানে ধর্মীয় আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে ধর্মতাত্ত্বিক সাম্য এনেছিল, সেখানে মন্দির প্রবেশ আন্দোলন ছিল একটি রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারের লড়াই, যা আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে সামাজিক ও আইনি বৈষম্যের মূলে আঘাত করেছিল।

উপসংহার ও ভবিষ্যত পরিপ্রেক্ষিত

হিন্দুধর্ম বা সনাতন ধর্মের দীর্ঘ এবং জটিল ইতিহাস কেবল একগুচ্ছ আচার-অনুষ্ঠানের সংকলন নয়; এটি নিরন্তর বিবর্তনশীল একটি ধর্মদর্শন। বৈদিক যাগযজ্ঞের মাধ্যমে প্রকৃতি উপাসনা থেকে শুরু করে উপনিষদের জ্ঞানবাদী বিপ্লব, পৌরাণিক অবতারবাদের মাধ্যমে ভক্তিনির্ভর উপাসনার প্রসার—প্রতিটি যুগেই এই ধর্মটি সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।

মূর্তিপূজার প্রচলনের ইতিহাস থেকে শুরু করে রামায়ণের উত্তরকাণ্ডের মতো বিতর্কিত বিষয়গুলির বিশ্লেষণ এবং বর্ণপ্রথার কঠোর সমালোচনা এই ধর্মের গতিশীলতা প্রমাণ করে। এই ধর্ম তার বহুত্ববাদী দর্শন এবং অভ্যন্তরীণ সমালোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন দার্শনিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছে।

যদিও জাতিভেদ প্রথা এবং এর বিতর্কগুলি বহু শতাব্দী ধরে হিন্দু সমাজের একটি অন্ধকার দিক হিসেবে বিদ্যমান ছিল, ভক্তি আন্দোলন এবং আধুনিক সমাজ সংস্কার আন্দোলনগুলি প্রমাণ করেছে যে এই কাঠামোর মধ্যেও সংস্কার এবং মুক্তির বীজ রয়েছে।

বেদকে যদিও পরমেশ্বর সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের জন্য দান করেছেন এবং এর অধ্যায়নে সবার অধিকার রয়েছে, হিন্দুধর্মের সবচেয়ে মৌলিক এবং সর্বজনীন বার্তা হলো, “সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই”। এই মৌলিক ভাবধারাই হিন্দুধর্মকে একটি শাশ্বত ও নিরন্তর গতিশীল জীবনবোধ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।

 

নির্বাচিত তথ্যসূত্র (References)

1 বাংলাপিডিয়া – হিন্দুধর্মের উৎপত্তি ও ঐতিহাসিক বিবর্তন।

3 উইকিপিডিয়া – বৈদিক যুগ (Vedic period)।

11 অগ্নিবীর বাংলা – বেদ কেন সনাতন ধর্মের মূল ও প্রধান ধর্মগ্রন্থ।

14 IJFMR – ভারতীয় সমাজ ও সাহিত্যে রামায়ণের প্রভাব।

15 উইকিপিডিয়া – রামায়ণ (Ramayana) – সাংস্কৃতিক ও নৈতিক প্রভাব, উত্তরকাণ্ড বিতর্ক।

5 সনাতন ধর্মতত্ত্ব – মূর্তিপূজার প্রচলন।

27 হিন্দু শাস্ত্র – বর্ণবাদ বা জাতপ্রথা।

26 আল-মজলিসুল ইলমি – হিন্দুদের জাতি ভেদ প্রথা সম্পর্কে।

31 উইকিপিডিয়া – টেম্পল এন্ট্রি প্রোক্লামেশন।

4 আলাপচারিতা – উপনিষদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদ।

9 অ্যানিমে দেবতা – উপনিষদে আত্মা ও ব্রহ্মের ধারণা।

8 উইকিপিডিয়া – উপনিষদ (Upanishads) – আত্মা ও ব্রহ্মের ধারণা।

25 লন্ডন মন্দির BAPS – মূর্তিপূজা।

29 ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি – ভক্তি আন্দোলন ও জাতিভেদ প্রথা।

20 আরএএস নোটস – ভারতে প্রথম মূর্তিপূজা।

22 ওয়ার্ল্ড হিস্টরি ডট ওআরজি – গুপ্ত স্থাপত্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *