বৌদ্ধ ধর্ম: উৎপত্তি, গৌতম বুদ্ধের জীবন দর্শন, এবং আধুনিক দলিত আন্দোলন—বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ | জনতা নিউজ
প্রতিবেদক: জে এইচ সুমন (জনতা নিউজ ম্যাগাজিন)
১. ভূমিকা: বৌদ্ধ ধর্মের শাশ্বত যাত্রা
বিশ্বের প্রাচীনতম ও প্রভাবশালী ধর্মীয়-দার্শনিক ব্যবস্থাগুলির মধ্যে বৌদ্ধ ধর্ম অন্যতম, যা প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে প্রাচীন ভারতে সামাজিক ও আধ্যাত্মিক বিপ্লবের জন্ম দিয়েছিল। এই ধর্ম কেবল একটি আধ্যাত্মিক পথ নয়, বরং এটি একটি সুসংগঠিত নৈতিক এবং দার্শনিক কাঠামো, যা মানব জীবনের দুঃখের প্রকৃতি, উৎপত্তি, নিবৃত্তি এবং মুক্তির পথ নিয়ে আলোচনা করে। ‘বুদ্ধ’ (Buddha) শব্দটি সংস্কৃত এবং পালি উভয় ভাষায় ব্যবহৃত হয়, যার অর্থ ‘বোধিপ্রাপ্ত’ বা ‘জাগ্রত জন’। এই ধর্মটি ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব সিদ্ধার্থ গৌতমের (পালি: সিদ্ধার্থ গৌতম) শিক্ষা ও জীবন-দর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত।
এই প্রতিবেদনটি বৌদ্ধ ধর্মের উৎপত্তির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, প্রতিষ্ঠাতা গৌতম বুদ্ধের বিস্তারিত জীবন, বৌদ্ধ দর্শনের মূলনীতি (যেমন চতুরার্য সত্য, অষ্টাঙ্গিক মার্গ, অনাত্মবাদ), সাম্রাজ্যবাদী পৃষ্ঠপোষকতায় এর বিস্তার, প্রধান শাখা-প্রশাখার মতাদর্শগত পার্থক্য এবং আধুনিক ভারতে ড. বি. আর. আম্বেদকরের নেতৃত্বে পরিচালিত দলিত বৌদ্ধ আন্দোলন (নবযান) পর্যন্ত এর সামগ্রিক যাত্রাপথের এক পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ প্রদান করে। বৌদ্ধ ধর্মের উদ্ভবকে কেবল একজন মহান শিক্ষকের আগমনের ফল হিসেবে দেখলে ভুল হবে; এর উত্থানকে প্রাচীন ভারতের ব্রাহ্মণ্যবাদের কর্তৃত্ব ও আচার-সর্বস্বতার বিরুদ্ধে একটি গভীর সামাজিক ও দার্শনিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিচার করা প্রয়োজন।
২. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও উত্থান: শ্রমন আন্দোলন
বৌদ্ধ ধর্মের উত্থান খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের এক যুগসন্ধিক্ষণে ঘটেছিল, যখন উত্তর ভারতে প্রচলিত ধর্মীয় ও সামাজিক কাঠামো গভীর সংকটের মুখে ছিল। সেই সময়ে প্রতিষ্ঠিত বৈদিক ধর্ম মূলত পুরোহিত-কেন্দ্রিক (ব্রাহ্মণ) আচার-সর্বস্ব হয়ে উঠেছিল, যেখানে জটিল যাগযজ্ঞ এবং ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাই প্রাধান্য পেত। সাধারণ মানুষের আধ্যাত্মিক মুক্তি বা দার্শনিক কৌতূহল মেটানোর জন্য এই ধর্মীয় ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল না।
২.১. শ্রমন ঐতিহ্যের উত্থান (Sramana Movement)
আনুমানিক ৮০০ থেকে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে বৈদিক ধর্মের একটি ভিন্ন শাখা হিসেবে ‘শ্রমন’ (Sramana) নামে একটি প্রাচীন ভারতীয় ধর্মীয় আন্দোলন শুরু হয়। ‘শ্রমন’ শব্দের অর্থ ‘সন্ধানকারী’ বা ‘ভিক্ষু’। এই আন্দোলন প্রচলিত বৈদিক আচার-অনুষ্ঠান এবং ব্রাহ্মণদের পুরোহিততান্ত্রিক কর্তৃত্বকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে এক বৈপ্লবিক আধ্যাত্মিক পথের সন্ধান করেছিল।
শ্রমনরা কঠোর, আত্ম-নিয়ন্ত্রিত (ascetic) জীবনধারা অবলম্বন করত এবং জাগতিক জীবন ত্যাগ করে কেবল আধ্যাত্মিক সত্যের সন্ধানে মনোনিবেশ করত। এই ঐতিহ্যের মধ্যে দিয়েই জৈন ধর্ম এবং বৌদ্ধ ধর্ম—উভয়েরই উত্থান ঘটেছিল 3। শ্রমন আন্দোলনের প্রভাব এতটাই গভীর ছিল যে, পরবর্তীকালে হিন্দু ধর্মও এই ঐতিহ্যের অনেক ধারণা, যেমন সাংসার (জন্ম-মৃত্যুর চক্র) এবং মোক্ষ (এই চক্র থেকে মুক্তি), আত্মস্থ করেছিল 5। শ্রমনরা যেহেতু প্রচলিত ব্রাহ্মণ্যবাদী কাঠামোর বাইরে গিয়ে আধ্যাত্মিক মুক্তি অর্জনের একটি বিকল্প পথের সন্ধান করছিলেন, এই আন্দোলনই গৌতম বুদ্ধকে তাঁর নতুন নৈতিক ও সামাজিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য অনুকূল পটভূমি তৈরি করে দেয়। এটি প্রমাণ করে যে, বৌদ্ধ ধর্মের দার্শনিক ভিত্তি গড়ে ওঠার আগেই সমাজে পরিবর্তনকামী একটি শক্তিশালী স্রোত বিদ্যমান ছিল।
৩. সিদ্ধার্থ থেকে তথাগত: গৌতম বুদ্ধের জীবনী ও বোধি লাভ
৩.১. রাজকীয় জীবন এবং মহাত্যাগ
বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা সিদ্ধার্থ গৌতমের জন্ম আনুমানিক ৫৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বর্তমান নেপালের অন্তর্গত লুম্বিনীতে, কপিলাবস্তুর রাজা শুদ্ধোধন ও রানী মায়ার ঘরে। তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলিকে পরবর্তীকালে ‘আটটি মহা-ঘটনা’ (Eight Great Events) হিসেবে বর্ণনা করা হয়, যার মধ্যে জন্ম, বোধি লাভ, প্রথম ধর্মোপদেশ, এবং মহাপরিনির্বাণ অন্যতম।
রাজকুমার হিসেবে লালিত-পালিত হলেও, জীবনের চরম সত্যগুলি তাঁর কাছ থেকে বেশিদিন লুকিয়ে থাকেনি। ২৯ বছর বয়সে তিনি যখন প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে আসেন, তখন তিনি পরপর চারটি দৃশ্য (Four Sights) প্রত্যক্ষ করেন—এক বৃদ্ধ মানুষ, এক অসুস্থ ব্যক্তি, একটি মৃতদেহ, এবং একজন সন্ন্যাসী। এই দৃশ্যগুলি তাঁকে জগতের জরা, ব্যাধি এবং মৃত্যুর অনিবার্য দুঃখ সম্পর্কে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। এই গভীর উপলব্ধিই তাঁকে আধ্যাত্মিক সত্যের সন্ধানে উদ্বুদ্ধ করে এবং তিনি তাঁর স্ত্রী ও নবজাতক পুত্র রাহুলকে ত্যাগ করে রাজকীয় জীবন থেকে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। এই ঘটনা ‘মহাত্যাগ’ নামে পরিচিত।
৩.২. মধ্যপথের আবিষ্কার এবং বোধি লাভ
রাজকীয় জীবনের ভোগবিলাস ত্যাগ করার পর সিদ্ধার্থ শ্রমন ঐতিহ্যের কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন পথ অবলম্বন করেন এবং বহু বছর কঠিন তপস্যা করেন। তবে তিনি শীঘ্রই উপলব্ধি করেন যে, চরম ভোগবিলাস এবং অনাবশ্যক শারীরিক কৃচ্ছ্রসাধন—উভয় পথই দুঃখময় এবং আধ্যাত্মিকতা বর্জিত চরমপন্থা।
এই চরমপন্থা ত্যাগ করে সিদ্ধার্থ একটি ভারসাম্যপূর্ণ পথ খুঁজে বের করেন, যা ‘মধ্যপথ’ (Middle Way) নামে পরিচিত 1। এটিই বৌদ্ধ ধর্মের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত। মধ্যপথের ধারণা প্রবর্তনের মাধ্যমে, বুদ্ধ তাঁর ধর্মীয় পথকে কেবল কঠোর সন্ন্যাসীদের জন্য সীমাবদ্ধ না রেখে সাধারণ গৃহস্থ এবং ভিক্ষু—উভয়ের জন্যই উন্মুক্ত করে দেন।
এরপর তিনি বোধগয়ায় একটি বোধি গাছের নিচে ৪৯ দিন ধরে ধ্যান করেন এবং এক গভীর অন্তর্দৃষ্টি লাভ করে বোধি প্রাপ্ত হন। এই মুহূর্ত থেকে তিনি ‘বুদ্ধ’ বা ‘জাগ্রত জন’ নামে পরিচিত হন। এই বোধি লাভের মাধ্যমে তিনি দুঃখের প্রকৃতি এবং মুক্তির পথ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন। বোধি লাভের পর তাঁর প্রথম ধর্মোপদেশটি ছিল সারনাথের হরিণ পার্কে, যেখানে তিনি চতুরার্য সত্য এবং অষ্টাঙ্গিক মার্গ প্রচারের মাধ্যমে ধর্মচক্র প্রবর্তন করেন। তাঁর এই শিক্ষা অনুসরণ করে সংঘ (Buddhist community) গঠিত হয়। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি কুশীনগরে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন।
৪. বৌদ্ধ দর্শন ও তার মূল ভিত্তি: দুঃখের বিশ্লেষণ ও নির্বাণের পথ
বৌদ্ধ ধর্মের মূল দার্শনিক ভিত্তি হলো দুঃখের বাস্তবতাকে বোঝা এবং সেই দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করা—যা চতুরার্য সত্য এবং অষ্টাঙ্গিক মার্গের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
৪.১. চতুরার্য সত্য (Four Noble Truths)
চতুরার্য সত্য হলো সেই চারটি ‘সত্যি কথা’ যা বুদ্ধ তাঁর বোধি লাভের রাতে উপলব্ধি করেছিলেন। এই সত্যগুলি বৌদ্ধ চিন্তাধারার একটি সুসংগত কাঠামো সরবরাহ করে:
- দুঃখ আর্য সত্য (Dukkha – Suffering/Unsatisfactoriness): এই জগৎ দুঃখময় বা “অস্থায়ীভাবে বিদ্যমান” (standing unstable)। এই প্রথম সত্যটি হলো জীবনের মৌলিক সত্যের উপলব্ধি—দুঃখ আছে এবং দুঃখকে উপলব্ধি করতে হবে।
- দুঃখ সমুদয় আর্য সত্য (Samudaya – Origin of Suffering): দুঃখের কারণ আছে। এই কারণ হলো তৃষ্ণা (Tanha), কামনা, বাসনা এবং এই ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বের প্রতি তীব্র আসক্তি বা আকর্ষণ।
- দুঃখ নিরোধ আর্য সত্য (Nirodha – Cessation of Suffering): দুঃখের নিবৃত্তি সম্ভব। যদি এই তৃষ্ণা ও আসক্তিকে ছিন্ন করা যায় বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তবে দুঃখের চিরন্তন অবসান ঘটে—যা নির্বাণ নামে পরিচিত।
- দুঃখ নিরোধ মার্গ আর্য সত্য (Marga – Path to Cessation): দুঃখ নিরোধের পথ আছে, যা অনুসরণ করলে দুঃখ থেকে চিরমুক্তি লাভ করা যায়। এই পথটিই হলো অষ্টাঙ্গিক মার্গ।
৪.২. অষ্টাঙ্গিক মার্গ (Noble Eightfold Path)
অষ্টাঙ্গিক মার্গ হলো দুঃখ নিরোধের জন্য বুদ্ধ প্রবর্তিত মধ্যপথ। এই পথকে বৌদ্ধ ধর্মের মূল ভিত্তি বলা যায়। এই পথ অনুসরণ করে নির্বাণ লাভ সম্ভব। এই মার্গকে সাধারণত তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করা হয়: শীল (নৈতিকতা), সমাধি (মনন) এবং প্রজ্ঞা (অন্তর্দৃষ্টি)। প্রতিটি উপাদানের পূর্বে ব্যবহৃত ‘সম্মা’ (Sammā) শব্দের অর্থ হলো ‘সঠিক, যথাযথ বা সর্বোত্তম’।
অষ্টাঙ্গিক মার্গের আটটি উপাদান নিম্নরূপ:
| বিভাগ (Threefold Division) | অষ্টাঙ্গিক মার্গের উপাদান (পালি) | তাৎপর্য |
| প্রজ্ঞা (Prajñā – Wisdom) | ১. সম্যক দৃষ্টি (Sammā Diṭṭhi) | চারটি আর্য সত্য সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান; জগৎ ও জীবন সম্পর্কে মিথ্যাদৃষ্টি (অবিদ্যা) দূর করা |
| ২. সম্যক সঙ্কল্প (Sammā Saṅkappa) | অহিংসা ও ত্যাগের দৃঢ় সংকল্প; জ্ঞান অনুযায়ী জীবন পরিচালনার সঙ্কল্প | |
| শীল (Sīla – Morality) | ৩. সম্যক বাক্য (Sammā Vācā) | মিথ্যা, রূঢ় এবং পরনিন্দা থেকে বিরত থাকা |
| ৪. সম্যক কর্মান্ত (Sammā Kammanta) | অহিংসা এবং সৎকর্মের অনুশীলন | |
| ৫. সম্যক আজীব (Sammā Ājīva) | ন্যায়সঙ্গত উপায়ে জীবিকা নির্বাহ | |
| সমাধি (Samādhi – Concentration) | ৬. সম্যক ব্যায়াম (Sammā Vāyāma) | নেতিবাচক মানসিক অবস্থা দূর করে নৈতিক উন্নতির জন্য প্রচেষ্টা |
| ৭. সম্যক স্মৃতি (Sammā Sati) | দেহ, মন, অনুভূতি ও মানসিক প্রতিক্রিয়ার প্রতি পূর্ণ সচেতনতা | |
| ৮. সম্যক সমাধি (Sammā Samādhi) | গভীর ধ্যান ও চিত্তের একাগ্রতা অর্জন |
এই পথটি একদিকে অসংযত ভোগবিলাস এবং অন্যদিকে অনাবশ্যক শারীরিক কৃচ্ছ্রসাধনের মধ্যবর্তী পন্থা হিসেবে বিবেচিত। এই পথে সংযম, চিত্তের একাগ্রতা, মৈত্রী (সর্বজনীন হিতকামনা) এবং করুণা (দয়া) সহ সকল রকম পাপকর্ম থেকে বিরত থাকার উপর জোর দেওয়া হয়।
৪.৩. অনাত্মবাদ (Anatta) ও প্রতিত্যসমুৎপাদ (Pratityasamutpada)
বৌদ্ধ দর্শনের এক মৌলিক স্তম্ভ হলো অনাত্মবাদ, অর্থাৎ স্থায়ী আত্মার (Atman) অস্তিত্ব অস্বীকার করা। ভারতীয় দর্শনের অন্যান্য সকল শাখা যেখানে কোনো না কোনোভাবে আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করে, সেখানে গৌতম বুদ্ধ আত্মা সম্পর্কিত চিরাচরিত মতবাদকে পুরোপুরি অস্বীকার করে বললেন যে জগতে আত্মা নামক কোনো শাশ্বত বস্তুর অস্তিত্ব নেই।
বৌদ্ধমতে, আমাদের ‘স্ব’ বা আত্মবোধ কোনো স্থায়ী বা অপরিবর্তনীয় সত্তা নয়। বরং এটি হলো পাঁচটি স্কন্ধ (aggregates)—রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার, এবং বিজ্ঞান—এর একটি ক্ষণস্থায়ী, নিরন্তর পরিবর্তনশীল সংমিশ্রণ। এই ধারণাটি মুক্তি বা নির্বাণ লাভের লক্ষ্যকে আমূল পরিবর্তন করে দেয়। হিন্দুধর্মে মুক্তি হলো আত্মার ব্রহ্মের সঙ্গে একাত্মতা, কিন্তু বৌদ্ধধর্মে নির্বাণ হলো তৃষ্ণা ও আসক্তির চিরন্তন অবসান, যা এই অস্থায়ী সত্তার প্রতি মোহকে ছিন্ন করে লাভ করা যায়।
অনাত্মবাদের ধারণা প্রতিত্যসমুৎপাদ বা কার্যকারণ নির্ভরশীলতার নীতির সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত। প্রতিত্যসমুৎপাদ ব্যাখ্যা করে যে, সকল ঘটনা এবং সকল অস্তিত্ব একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে উদ্ভূত হয়। জন্ম ও মৃত্যুর চক্র (সংসার) অজ্ঞতা থেকে শুরু করে সচেতন প্রক্রিয়া হিসেবে ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। যেহেতু কোনো স্থায়ী আত্মা নেই, পুনর্জন্ম গ্রহণকারী সত্তাটি কেবল পূর্বের কর্ম ও প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে উত্থিত হয়। এই দর্শন প্রমাণ করে যে জীবনের মৌলিক লক্ষ্য হলো অস্তিত্বের এই নির্ভরশীল ও অনিত্য প্রকৃতি সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করা, যা অজ্ঞতা (অবিদ্যা) দূর করার মাধ্যমে সম্ভব হয়।
৫. বৌদ্ধ ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও প্রাচীন ইতিহাস
বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের পর তাঁর বাণী, দর্শন এবং সংঘ পরিচালনার নিয়মকানুন সংরক্ষণ করার জন্য বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ সংগীতি (Council) অনুষ্ঠিত হয়। এই সংগীতিগুলি বৌদ্ধ ধর্মকে একটি সুসংগঠিত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সহায়ক হয়েছিল।
৫.১. বৌদ্ধ সংগীতি এবং ত্রিপিটক সংকলন
প্রথম সংগীতিতে বুদ্ধের ধর্ম (সূত্র) এবং বিনয় (ভিক্ষুদের নিয়মাবলী) আবৃত্তি ও সংকলিত হয়। এরপর বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের প্রায় একশ বছর পর রাজা কালাশোকের রাজত্বকালে বৈশালীর বালুকারামে দ্বিতীয় সংগীতি অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল বজ্জীপুত্র ভিক্ষুদের দ্বারা দশবিধ বিনয়-বহির্ভূত আচরণের জন্য সৃষ্ট বিতর্ক নিষ্পত্তি করা। এই সভায় থেরবাদ বা প্রাচীন সঙ্ঘকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতি ছিল বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি সম্রাট অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় মগধের রাজধানী পাটালিপুত্র নগরের অশোকারামে অনুষ্ঠিত হয় (আনুমানিক ২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। এই সভার সভাপতিত্ব করেন মোগ্গলিপুত্র তিস্স। এই সংগীতিতে বুদ্ধবাণীকে তিনটি প্রধান ভাগে (বিনয়, সূত্র, এবং অভিধর্ম) ভাগ করে ‘ত্রিপিটক’ নামে গ্রন্থাকারে সংকলন করা হয়। এই সংকলন বৌদ্ধ ধর্মের প্রামাণিক ভিত্তি তৈরি করে।
৫.২. সম্রাট অশোকের ভূমিকা: বৈশ্বিক বিস্তার
মৌর্য সম্রাট অশোকের (আনুমানিক ২৬৮-২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) পৃষ্ঠপোষকতা বৌদ্ধ ধর্মকে একটি আঞ্চলিক ধর্ম থেকে বিশ্ব ধর্মে পরিণত করার ক্ষেত্রে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসলীলা দেখার পর অশোক অনুতপ্ত হন এবং বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন। এরপর তিনি বৌদ্ধ ধর্মকে কেবল ব্যক্তিগত বিশ্বাস হিসেবে নয়, বরং তাঁর বিশাল সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রীয় নৈতিক নীতি (‘ধর্ম’ বা ধার্মিকতা) হিসেবে প্রচার করেন।
অশোকের অবদান ছিল বহুমাত্রিক। তিনি সারা ভারতে এবং বিদেশে ধর্মপ্রচারের ব্যবস্থা করেন। তিনি অসংখ্য বৌদ্ধ স্থাপনা, যেমন সাঁচি এবং মহাবোধি মন্দির নির্মাণ করেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাঁর ধর্মপ্রচার (Proselytism)। বৌদ্ধ কিংবদন্তি অনুসারে, অশোক বৌদ্ধ ভিক্ষুদের (মিশনারি) ভারতের বাইরে, বিশেষত ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত হেলেনিস্টিক রাজাদের কাছে ধর্ম প্রচারের জন্য পাঠিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্টতই সে সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। এই রাজকীয় সমর্থন এবং সংঘবদ্ধ ধর্মপ্রচার বৌদ্ধ ধর্মকে দ্রুত মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। সম্রাট অশোকের এই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বৌদ্ধ ধর্মের বিশ্বব্যাপী উপস্থিতির সূচনা করেছিল।
৬. বৌদ্ধ ধর্মের শাখা-প্রশাখা: হীনযান, মহাযান ও নবযান
সময়ের সাথে সাথে দার্শনিক ব্যাখ্যা, ভৌগোলিক অবস্থান এবং অনুশাসন পালনের তারতম্যের কারণে বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে প্রধান দুটি শাখা গড়ে ওঠে: হীনযান এবং মহাযান।
৬.১. হীনযান (Hīnayāna) ও মহাযান (Mahāyāna)
এই বিভাজন প্রথম শতাব্দীর দিকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ‘মহাযান’ শব্দের অর্থ ‘মহা যান’ (Greater Vehicle), এবং তারা পূর্ববর্তী বা অপেক্ষাকৃত রক্ষণশীল সম্প্রদায়কে ‘হীন যান’ (Lesser Vehicle) নামে অভিহিত করত।
থেরবাদ (Theravada):
থেরবাদ হলো হীনযান ঐতিহ্যের একমাত্র টিকে থাকা প্রধান ধারা, যা দক্ষিণ এশিয়ায় (শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া) ব্যাপক জনপ্রিয়। এই সম্প্রদায় মতবাদ ও সন্ন্যাস প্রথার নিয়মানুবর্তিতার ব্যাপারে অত্যন্ত রক্ষণশীল। তারা শুধুমাত্র পালি ক্যানন বা প্রাচীনতম বৌদ্ধ শাস্ত্রগুলিকে প্রামাণিক হিসেবে গ্রহণ করে এবং নতুন রচনা বা সংযোজনকে সাধারণত স্বীকৃতি দেয় না। থেরবাদের প্রধান লক্ষ্য হলো ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ‘অরহৎ’ (Arhat) বা নির্বাণ লাভ করা। এখানে প্রজ্ঞা (Wisdom) গুণটি করুণা (Compassion) গুণের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
মহাযান (Mahāyāna):
মহাযান সম্প্রদায় উদার মতাবলম্বী হিসেবে পরিচিত। তারা পালি ক্যাননের পাশাপাশি পরবর্তীকালে উদ্ভূত নতুন সূত্র ও শিক্ষাকেও (যেমন লোটাস সূত্র) সমান গুরুত্ব দেয়। মহাযানের মূল আদর্শ হলো বোধিসত্ত্ব পথ (Bodhisattva Path), যেখানে একজন ব্যক্তি ব্যক্তিগত নির্বাণের আগে সকল প্রাণীর মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য বুদ্ধত্ব লাভ করতে সংকল্পবদ্ধ হন। এই পথে প্রজ্ঞা ও করুণা উভয়কেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। মহাযান উত্তর এশিয়া (চীন, জাপান, কোরিয়া, তিব্বত) এবং তার সংস্কৃতিতে ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। মহাযান যখন উত্তর এশিয়ায় ছড়ায়, তখন এটি স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সহজে আত্মস্থ করে নেয়, যা এর ব্যাপক প্রসারে সাহায্য করেছিল।
থেরবাদ বনাম মহাযান: প্রধান দার্শনিক পার্থক্যসমূহ
| বৈশিষ্ট্য | থেরবাদ (Hinayana ঐতিহ্যের অংশ) | মহাযান |
| মূল লক্ষ্য | ব্যক্তিগত নির্বাণ (অরহৎ হওয়া) | সকল প্রাণীর কল্যাণে বুদ্ধত্ব লাভ (বোধিসত্ত্ব আদর্শ) |
| শাস্ত্রের ভিত্তি | একান্তভাবে পালি ক্যানন | পালি ক্যানন সহ অতিরিক্ত সংস্কৃত সূত্র ও নতুন শিক্ষা |
| গুরুত্বপূর্ণ গুণ | প্রজ্ঞা (Wisdom) | করুণা (Compassion) ও প্রজ্ঞা |
| বিস্তার | দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া | উত্তর এশিয়া (চীন, জাপান, তিব্বত) |
৭. আধুনিক যুগে বৌদ্ধ আন্দোলন: ড. আম্বেদকর ও নবযান (Navayana)
বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে আধুনিক যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সমাজ-রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো দলিত বৌদ্ধ আন্দোলন, যা ড. ভীমরাও রামজি আম্বেদকরের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিল।
৭.১. আম্বেদকরের ধর্মান্তরের কারণ
ড. বি. আর. আম্বেদকর ছিলেন ভারতের একজন বিশিষ্ট আইনজ্ঞ, প্রথম আইনমন্ত্রী, এবং ভারতীয় সংবিধানের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি ভারতের বর্ণপ্রথা এবং হিন্দুত্বের চতুর্বর্ণ প্রথার কঠোর সমালোচক ছিলেন। তিনি মনে করতেন, হিন্দুত্বের কাঠামো ভারতীয় সমাজের জন্য ব্রিটিশ শাসনের চেয়েও বেশি বিপজ্জনক, কারণ এটি দলিতদের মানবিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করে।
আম্বেদকর দীর্ঘদিন ধরেই হিন্দুধর্ম ত্যাগ করার পরিকল্পনা করছিলেন। ১৯৩৬ সালে তিনি ঘোষণা করেন যে, মানুষের মতো ব্যবহার পেতে চাইলে দলিতদের ধর্মান্তরিত হওয়া উচিত। তিনি বুদ্ধের বাণী থেকে স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্বের নীতি গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মতে, হিন্দু ধর্মে এই নীতিগুলির কোনো স্থান নেই, তাই বুদ্ধের আদর্শ গ্রহণ করলে ভারতীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক আদর্শ পরস্পরের পরিপূরক হবে।
৭.২. নাগপুরের গণ-দীক্ষা ও নবযান বৌদ্ধ ধর্ম
১৯৫০-এর দশকে আম্বেদকর বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি বিশেষ ঝোঁক দেখান। অবশেষে, ১৯৫৬ সালের ১৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিনে মহারাষ্ট্রের নাগপুরের দীক্ষভূমিতে (Deekshabhoomi) তিনি প্রায় ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার দলিত অনুগামীকে সঙ্গে নিয়ে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। এটি ভারতের দলিত আন্দোলনে নতুন সাড়া জাগায় এবং নিম্নবর্ণের মানুষদের নিজস্ব স্বর গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
আম্বেদকর তাঁর প্রবর্তিত বৌদ্ধ ধর্মের নাম দেন ‘নবযান’ বা ‘নব্য-বৌদ্ধ ধর্ম’ (Neo-Buddhism)। এই আন্দোলন প্রচলিত থেরবাদ, মহাযান ও বজ্রযানের শিক্ষাগুলিকে প্রত্যাখ্যান করে এবং সামাজিক সাম্য ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে বুদ্ধের দর্শনকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করে। আম্বেদকরের মতে, তিনি তিনটি নীতির জন্য বৌদ্ধ ধর্ম পছন্দ করেন: প্রজ্ঞা (অলৌকিকতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুক্তিসঙ্গত জ্ঞান), করুণা (সমস্ত প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা), এবং সাম্য (সমস্ত মানুষকে সমান মনে করা)। তাঁর রচিত গ্রন্থ The Buddha and His Dhamma নবযান বৌদ্ধদের পবিত্র গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত।
৭.৩. বাইশটি শপথ ও সামাজিক বিপ্লব
নাগপুরের গণ-দীক্ষা অনুষ্ঠানে নব-ধর্মান্তরিতদের ত্রিরত্ন ও পঞ্চশীলের পাশাপাশি বাইশটি শপথ গ্রহণ করতে হয়েছিল। এই শপথগুলি পুরোনো হিন্দু আচার-বিশ্বাস এবং বর্ণপ্রথাকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করার নির্দেশ দেয়। আম্বেদকর মনে করতেন, এই শপথগুলি সামাজিক বিপ্লবের পথনির্দেশক, যা দলিতদের কর্মপ্রেরণা যোগায়।
নবযান আন্দোলন এই অর্থে একটি ‘এনগেজড বুদ্ধিজম’ (Engaged Buddhism), যা বুদ্ধের মূল নৈতিক নীতিগুলিকে সমসাময়িক সামাজিক বৈষম্য মোকাবেলা করার জন্য ব্যবহার করে 24। আম্বেদকরের এই পদক্ষেপ ছিল কেবল ধর্মীয় পরিবর্তন নয়, বরং বর্ণভিত্তিক শৃঙ্খল থেকে দলিতদের মুক্তি এবং একটি রাজনৈতিক ঘোষণা, যা প্রমাণ করে যে বৌদ্ধ দর্শন কেবল আধ্যাত্মিক মুক্তির জন্য নয়, বরং সমাজে সাম্য, স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
৮. উপসংহার: বৌদ্ধ ধর্মের চিরন্তন প্রাসঙ্গিকতা
বৌদ্ধ ধর্ম, শ্রমন আন্দোলনের পটভূমিতে উত্থান লাভ করে, বৈদিক ব্রাহ্মণ্যবাদের আনুষ্ঠানিকতা প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে এক বৈপ্লবিক দার্শনিক যাত্রা শুরু করেছিল 5। গৌতম বুদ্ধ চরমপন্থা পরিহার করে যে মধ্যপথের সন্ধান দিয়েছিলেন, তা চতুরার্য সত্য এবং অষ্টাঙ্গিক মার্গের মাধ্যমে দুঃখের নিবৃত্তি ও নির্বাণের ব্যবহারিক উপায় নির্দেশ করে 2। তাঁর অনাত্মবাদ এবং প্রতিত্যসমুৎপাদের ধারণা ভারতীয় দর্শনকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছিল, যেখানে মুক্তি আত্মার শাশ্বত মিলনের পরিবর্তে তৃষ্ণা ও আসক্তির অবসান দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়েছিল।
সম্রাট অশোকের রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা এবং তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতিতে ত্রিপিটকের সংকলন বৌদ্ধ ধর্মকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দেয় 14। পরবর্তীকালে, মতাদর্শের পার্থক্যের কারণে থেরবাদ (হীনযান) এবং মহাযানের সৃষ্টি হয়, যা বৌদ্ধ ধর্মকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে অভিযোজিত হতে সাহায্য করে।
আধুনিক ভারতে ড. বি. আর. আম্বেদকরের নেতৃত্বে সৃষ্ট নবযান বৌদ্ধ আন্দোলন এই প্রাচীন ধর্মের সামাজিক প্রাসঙ্গিকতাকে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করেছে। এটি প্রমাণ করে যে বৌদ্ধ দর্শন কেবল নির্বাণ লাভের আধ্যাত্মিক পথ নয়, বরং সমাজে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। বুদ্ধের উত্তরাধিকার, শান্তি, অহিংসা, এবং নৈতিকতার চিরন্তন বার্তা বহন করে চলেছে, যা তাকে আজকের দিনেও মানবজাতির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে।
৯. তথ্যসূত্র ও গ্রন্থপঞ্জী (References & Bibliography)
এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত তথ্য ও বিশ্লেষণের ভিত্তি হলো ঐতিহাসিক ও দার্শনিক গ্রন্থাবলী এবং গবেষণামূলক প্রবন্ধসমূহ। নিম্নে প্রধান প্রধান উৎসগুলির উল্লেখ করা হলো:
- Wikipedia (বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক নিবন্ধ, যেমন: বৌদ্ধ ধর্ম, গৌতম বুদ্ধ, হীনযান, মহাযান, দলিত বৌদ্ধ আন্দোলন, চতুরার্য সত্য, অষ্টাঙ্গিক মার্গ)
- Lumen Learning, LibreTexts – The Sramana Movement
- Fiveable Education – Key Events in the Life of Siddhartha Gautama; Anatta and Dependent Origination
- Vidyanagar College – বৌদ্ধ ধর্মের চতুরার্য সত্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ দর্শন
- Wikipedia & Other Sources – Four Noble Truths, Noble Eightfold Path
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা পত্র – বৌদ্ধ দর্শন: আত্মবাদ ও অনাত্মবাদ
- Bangladesh Open University (BOU) – বৌদ্ধ সংগীতি ইতিহাস
- INHCRF – Spread of Buddhism at the time of King Asoka
- Indian Express & Muktomona Blog – B. R. Ambedkar’s Conversion to Buddhism
- Donald S. Lopez Jr. on Buddhism – Introduction to the History of Indian Buddhism (Eugène Burnouf) এবং Bones, Stones, and Buddhist Monks (Gregory Schopen)
- B. R. Ambedkar, The Buddha and His Dhamma
